আগরতলা, ২৭ মার্চ : আগরতলা পুর এলাকায় পাইপলাইনের মাধ্যমে ৬৭ শতাংশ পরিবারে এখন পর্যন্ত পানীয়জলের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাজ্য বিধানসভায় বিধায়ক গোপাল চন্দ্র রায়ের এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, বর্তমানে আগরতলা পুর এলাকায় অটল মিশন ফর রিজুভেনেশন অ্যান্ড আরবান ট্রান্সফরমেশন-২.০ প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে আরও ১৩ শতাংশ পরিবারকে পানীয়জলের সংযোগ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। অবশিষ্ট ২০ শতাংশ পরিবারে পানীয়জলের সংযোগ দেওয়ার জন্যে দুটি প্রকল্পের মাধ্যমে ত্রিপুরা জল বোর্ড কাজ করে চলেছে। এই দুটি প্রকল্পের মধ্যে দৈনিক ৫.৫০ মিলিয়ন লিটার ক্ষমতাসম্পন্ন গ্রাউন্ড ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট তৈরি করার জন্য দরপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া দৈনিক ৬.৪২ মিলিয়ন লিটার ক্ষমতাসম্পন্ন সার্ফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করার জন্যে দরপত্র আহ্বান করার কাজ এগিয়ে চলেছে।
বিধায়ক রামপদ জমাতিয়ার অপর এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা জানান, ভূগর্ভস্থ জলকে বাঁচিয়ে রাখার লক্ষ্যে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় চেকড্যাম নির্মাণের মাধ্যমে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করে বহু জলাধার সৃষ্টি করা হয়েছে। ঐ সকল সংরক্ষিত জলাধারকে কেন্দ্র করে রাজ্যের পানীয়জল ও স্বাস্থ্য বিধান দপ্তর উদ্ভাবনীমূলক প্রকল্প স্থাপন করে জনসাধারণের জন্যে পানীয় এবং ব্যবহারযোগ্য জল সরবরাহ করছে। তিনি জানান, বৃষ্টির জল সংরক্ষিত করে বিভিন্ন জলাধারকে কেন্দ্র করে এখন পর্যন্ত মোট ৭টি উদ্ভাবনীমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এছাড়া ৩টি প্রকল্প চালুর অপেক্ষায় রয়েছে এবং ২টি প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে।
এদিকে ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের জন্য বিধানসভায় পেশ করা ব্যয় বরাদ্দের প্রস্তাবের উপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে বনমন্ত্রী অনিমেষ দেববর্মা বলেন, সারা দেশের সঙ্গে আমাদের রাজ্যও উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। রাজ্য সরকার প্রগতিশীল ও দায়িত্বশীল। ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের জন্য যে বাজেট পেশ করা হয়েছে তা সময়োপযোগী। প্রস্তাবিত বাজেটের নতুন করে কোন করের প্রস্তাব করা হয়নি। বাজেটে বিশেষ করে নজর দেওয়া হয়েছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পানীয়জল, কারিগরিশিক্ষা প্রভৃতি বিষয়ের উপর।
বিধানসভা অধিবেশনে প্রস্তাবিত বাজেট সমর্থন করে বনমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মাননিধি যোজনায় ২ লক্ষ ৭৭ হাজার ৯৭০ জন কৃষক উপকৃত হয়েছেন। তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ৮৪২ কোটি ৬২ লক্ষ টাকা জমা করা হয়েছে। কৃষির উন্নয়নে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি জৈব ও প্রাকৃতিক চাষে কৃষি দপ্তরের গুরুত্বের কথাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, খোয়াই জেলা হাসপাতালে নতুন ভবন গড়ে তোলা হবে। মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্ষার জল সংরক্ষণ করে পানীয়জল সরবরাহ প্রকল্প গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তেলিয়ামুড়ায় একটি এলিফেন্ট ওয়াচ টাওয়ার গড়ে তোলা হয়েছে। বন ধ্বংস রোধ করার জন্য ও বন ধ্বংসকারীদের চিহ্নিত করতে ড্রোন দিয়ে নজরদারি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রাজ্যের প্রতিটি জেলায় ফরেস্ট মার্কেট তৈরী করা হবে। এই বাজারে স্থানীয় ব্যবসায়ীগণ ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারবেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন পরিকল্পনা রূপায়ণের মাধ্যমে রাজ্য সরকার ত্রিপুরাকে ক্রমশ উন্নতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
২০২৫-২৬ অর্থ বছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট সমর্থন জানিয়ে সমবায়, সংখ্যালঘু উন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী শুক্লাচরণ নোয়াতিয়া বলেন, রাজ্যের প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষের বিকাশের জন্যই এই বাজেট তৈরী করা হয়েছে। তিনি বলেন, রাজ্য সরকার সংখ্যালঘু সহ সমাজের সব অংশের মানুষের সার্বিক উন্নয়নের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছে। সংখ্যালঘু অংশের মানুষের উন্নয়নকে সুনিশ্চিত করতে রাজ্য সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ওয়াকফ সম্পত্তির উন্নয়ন ও সুরক্ষার জন্য ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা ব্যয় করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত গ্রামগুলিতে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজকর্ম রূপায়ণের জন্য ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জনবিকাশ কার্যক্রমের অধীনে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ব্লকগুলিতে আর্থ-সামাজিক পরিকাঠামোর উন্নয়নের জন্য ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের প্রি-মেট্রিক ও পোস্ট-মেট্রিক স্কলারশিপ খাতে ৯ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। তিনি বলেন, দুঃস্থ সংখ্যালঘু পরিবারগুলির জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের জন্য নতুন একটি প্রকল্প চালু করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই প্রকল্পে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রাথমিকভাবে ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
আজ বিধানসভা অধিবেশনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের উপর সাধারণ আলোচনায় ট্রজারি বেঞ্চের আরও ১১ জন বিধায়ক অংশ নেন। বাজেট প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়ে সরকার পক্ষের মুখ্যসচেতক বিধায়ক কল্যাণী সাহা রায় বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার এবারের বাজেটে মধ্যবিত্তের জন্য বিরাট কর ছাড়ের সংস্থান রেখেছে। রাজ্যের মধ্যবিত্তদের পক্ষ থেকে এজন্য তিনি কেন্দ্রীয় সরকারকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, রাজ্যের প্রস্তাবিত বাজেটে জনগণের মনের অভিব্যক্তি প্রকাশ পেয়েছে। তিনি কিষাণ সম্মাননিধি, ফসল বীমা যোজনা, সহায়ক মূল্যে ধান ক্রয়, সুপার থাটি প্রভৃতি প্রকল্পের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এই বাজেট জনকল্যাণমুখী।
বিধায়ক পাঠানলাল জমাতিয়া বাজেট সমর্থন করে বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট সব অংশের মানুষের উন্নয়নের জন্যই করা হয়েছে। বিধায়ক সুবোধ দেববর্মা প্রস্তাবিত বাজেট সমর্থন জানিয়ে জনজাতি উন্নয়ন, বিদ্যালয় শিক্ষা ও উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে রাজ্যের উন্নয়নের কথা তুলে ধরেন। বিধায়ক তফাজ্জ্বল হোসেন প্রস্তাবিত বাজেট সমর্থন করে বলেন, প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষের কল্যাণে এই বাজেট তৈরী করা হয়েছে। বিধায়ক পিনাকী দাস চৌধুরী প্রস্তাবিত বাজেট সমর্থন করে বলেন, রাজ্য সরকার মানুষের জন্য কাজ করছে। এই বাজেট সময়োপযোগী। এর সুফল মানুষ পাচ্ছেন। প্রস্তাবিত বাজেট সমর্থন করে বিধায়ক পল দাংশু বলেন, এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে গত আর্থিক বছরের তুলনায় ১৬ শতাংশ বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রস্তাব রাখা হয়েছে। ত্রিপুরা অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে আরও বিকশিত হোক।
বিধায়ক রামপদ জমাতিয়া বাজেটকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, পানীয়জল সরবরাহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই বরাদ্দ বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন প্রস্তাবিত বাজেটে বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণের মাধ্যমে উন্নত ত্রিপুরা গড়ে উঠবে। বিধায়ক সঞ্জয়মানিক ত্রিপুরা রাজ্যের উন্নয়নের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে প্রস্তাবিত বাজেট সমর্থন করেন। বিধায়ক ফিলিপ কুমার রিয়াং প্রস্তাবিত বাজেট সমর্থন করে বলেন, এই বাজেট ভবিষ্যতের রোড ম্যাপ। বিধায়ক নন্দিতা দেববর্মা রিয়াং বিদ্যাজ্যোতি প্রকল্প, স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নতি, ব্রু শরনার্থী সমস্যার সমাধানের কথা উল্লেখ করে রাজ্যের অগ্রগতির কথা তুলে ধরেন। বিধায়ক যাদবলাল নাথ প্রস্তাবিত বাজেট সমর্থন করে বলেন, এই বাজেট শ্রমিক, কৃষক, মধ্যবিত্তের উন্নয়নের বাজেট।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন