(উওম সাহা) মেলাঘর , ২৮ মে : বাড়ির উঠোনে সন্ধ্যার পর সপরিবারে এক ঘন্টার হাঁটা ছিল বেশ কিছুদিনের অভ্যেস । ১৪ মে থেকেই শরীরটা ভাল যাচ্ছিলনা । কোন কিছুই যেন ছন্দে চলছিল না । সেদিন হাঁটতেও ভালাে লাগছিল না । রাতেই ঘরে আলােচনা হল পরদিন হাসপাতালে গিয়ে কোভিড টেস্ট করাবাে । যথারীতি ১৫ মে মেলাঘর হাসপাতালে কোভিড টেস্ট হলাে । মিলে গেল পূর্বানুমান । কোভিড কেয়ার সেন্টারে যেতে বললেন ডাক্তারবাবুরা । তখনাে মেলাঘর হাসপাতালে চালু হয়নি কোভিড কেয়ার সেন্টার । যেতে হবে লালসিং মুড়া সেন্টারে । সামান্য ভয় পেয়ে গেলাম । কয়েক বছর আগে আমার হার্টের বাইপাস অপারেশন হয়েছে । সঙ্গে এরােটিক ভাল্ব রিপ্লেসমেন্ট করা । বেশ কিছু ঔষধ খেতে হয় প্রতিদিন । ইতিমধ্যে নতুন হ্যাপা করােনা পজিটিভ । হােম আইসােলেশন এ থেকে সঠিক চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়া যাবে কিনা ভাবছিলাম সে বিষয়ে । সেই সময় ফোন পেলাম স্বাস্থ্য দপ্তরের । জানতে চাইলেন আমার শারীরিক অবস্থা । হােম আইসােলেশন এ থাকার পুরাে বিষয়টা ছেড়ে দেয়া হলাে আমার পরিবারের সিদ্ধান্তের উপর । স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে যেকোনাে সময় সবধরনের সহযােগিতার আশ্বাস পেলাম । ইতিমধ্যে আশাকর্মী সহ মাল্টিপারপাস ওয়ার্কার আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন পালস অক্সিমিটার নামে ছােট্ট একটি যন্ত্র । যা আমাকে ভীষণ ভাবে উপকৃত করল । শরীরের অক্সিজেন লেভেল প্রতিনিয়ত মনিটর করাটা এ সময় ভীষণ দরকারি । প্যারাসিটামল , এন্টিবায়ােটিক , এন্টাসিড , ভিটামিন জাতীয় ঔষধের একটা প্যাকেট আমার হাতে ধরিয়ে বিদায় নিলেন স্বাস্থ্যকর্মীরা । কখন কোন ঔষধ খেতে হবে ঔষুধের গায়ে মার্কার দিয়ে লেখা রয়েছে । সে অনুযায়ী ঔধুধ চলল । গরম জলের ভাপ নেওয়া এবং উষ্ণ গরম জলে গার্গল করা চলল দিনে বেশ কয়েকবার । এ সময় মানসিক জোর খুব দরকার । ভেঙেপড়া নয় , করােনা কে ভয় নয় , করােনাকে জয় করার দৃঢ়তা দরকার । অন্য পুরনাে রােগগুলি ও এসময় মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে । যত ছােট বা বড়ই হােক তাদের কাউকে অবহেলা করা যাবে না ।
আমার নিভৃতবাসের দ্বিতীয় দিনেই মােবাইলে একটি লিঙ্ক পেলাম সিপাহীজলা জেলা প্রশাসন থেকে । যুক্ত হবার আহ্বান জানিয়েছেন জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক । দুপুর ২ টা থেকে ৪ টা অব্দি চলল এই ভিডিও ভিত্তিক কনফারেন্স । জেলাশাসক বিশ্বশ্রী বি , এ ডি এম তমাল মজুমদার , ভিডিও কনফারেন্সে হােম আইসােলেশন এ থাকা সমস্ত রােগীদের খোঁজখবর নিচ্ছিলেন । চাকরি সূত্রে এ ডি এম স্যার আমার পূর্ব পরিচিত । স্যার জানতে চাইলেন আমার শারীরিক অবস্থা এবং কোন সমস্যা রয়েছে কিনা ইত্যাদি । সিপাহীজলা জেলার হােম আইসােলেশন এ থাকা সমস্ত রােগীরাই একে একে তাদের সমস্যার কথা বলে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সহ অন্যান্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ নিলেন । এই ব্যবস্থায় আমরা ভীষণ ভাবে উপকৃত হলাম । ই এন টি , আই , মেডিসিন , হার্ট , পালমােনারি প্রভৃতি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা পরামর্শ দিলেন । সপ্তাহে তিন দিন চলছে অনলাইন এই ভিডিও কনফারেন্স । তাছাড়া জেলা কোভিড কেয়ার রুম থেকে প্রতিদিন একবার ফোন করে রােগীর খবরা খবর নিচ্ছেন । জেলা প্রশাসনকে সেজন্য আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই ।
ধীরে ধীরে ভালাে হয়ে উঠছি আমি । আমার ভালাে হয়ে ওঠার সাতকাহন তুলে ধরলাম সবাইকে জানানাের জন্য । এই মুহূর্তে আমার কোন উপসর্গ নেই । নিশ্চিত মনে হচ্ছে আমি এখন কোভিড নেগেটিভ । পজিটিভ থিঙ্কিং এবং পজিটিভ অ্যাটিটিউড নিয়ে আরও কয়েকদিন থাকছি একান্ত নিভৃতবাসে । সবাই ভালাে থাকুন ।
রাজ্যের আরও ৩ টি বাংলা মাধ্যম বিদ্যালয় রূপান্তরিত হবে ইংরেজী মাধ্যমে : শিক্ষামন্ত্রী
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন