করোনা কার্ফুতে গরীব মানুষের প্রতিদিনের খাবারের জোগাড় করাই কঠিন হয়ে পড়ে । প্রতিদিনের উপার্জনই যাদের অন্নের জোগাড়ের একমাত্র পথ , এই কঠিন সময়ে দিনযাপনের আশঙ্কা যখন ভাবিয়ে তুলছিল তখন রাজ্যের অর্থনৈতিকভাবে অস্বচ্ছল পরিবারের কথা বিবেচনা করে মুখ্যমন্ত্রী কোভিড স্পেশাল রিলিফ প্যাকেজ প্রকল্প কতটা সহায়ক হয়েছে, এই নিয়ে কলম ধরেছেন ........ বিনয় মজুমদার
আগরতলা , ২০ জুন : সমগ্র বিশ্বই আজ এক অপ্রত্যাশিত কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন । সব কিছুকে ছাপিয়ে গুরুত্বের শীর্ষে আজ স্থান করে নিয়েছে স্বাস্থ্য সুরক্ষা । এই কোভিড -১৯ অতিমারির সময়ে নিজেকে ও পরিবারকে সুরক্ষিত রাখার প্রধান শর্ত সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং অপ্রয়ােজনে বাড়ির বাইরে না যাওয়া । এরকম পরিস্থিতিতে রােজগারে বাধ সেধেছে কখনাে লকডাউন কখনাে করােনা কার্ফ বা কন্টেইনমেন্ট জোন । এমন অনেক পরিবার রয়েছেন যারা প্রতিদিনের উপার্জনের উপর নির্ভর করে থাকেন । এমন পরিবারের কাছে প্রতিদিনের খাবারের জোগাড় করাই কঠিন হয়ে পড়েছে ।
করােনা অতিমারির দ্বিতীয় ঢেউ মােকাবেলায় রাজ্যেও জারি করা হয়েছে করােনা কাফু । সংক্রমণের হার বিবেচনা করে কোন কোন অঞ্চলে এখনাে কার্টু বলবৎ রয়েছে । এমতাবস্থায় প্রতিদিনের উপার্জনই যাদের অন্নের জোগাড়ের একমাত্র পথ , এই কঠিন সময়ে দিনযাপনের আশঙ্কা যখন ভাবিয়ে তুলছিল তখন রাজ্যের অর্থনৈতিকভাবে অস্বচ্ছল পরিবারের কথা বিবেচনা করে মুখ্যমন্ত্রী কোভিড স্পেশাল রিলিফ প্যাকেজ প্রকল্পের ঘােষণা করে রাজ্য সরকার । প্রয়ােজন রয়েছে এমন ৭ লক্ষ পরিবারে দুশ্চিন্তা লাঘব করে বিনামূল্যে চাল , ডাল সহ অন্যান্য প্রয়ােজনীয় খাদ্য । সামগ্রী ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি ১ হাজার টাকা করে পাঠায় সরকার । সমাজের অন্তিম ব্যক্তির সমস্যা ও প্রয়ােজনীয়তা সম্পর্কে সরকার কতটা দায়িত্বশীল এই পদক্ষেপ তার এক বড় দৃষ্টান্ত বলা চলে । অনাহারে যেন কাউকেই থাকতে না হয় সেই লক্ষ্যেই এই সিদ্ধান্ত । মুখ্যমন্ত্রী কোভিড স্পেশাল রিলিফ প্যাকেজ হাসি ফুটিয়েছে গৌরী চক্রবর্তী , কাজল গােয়ালা চৌহান , উত্তম ঘােষ , নিরাপদ কর , চম্পা দাস , দীপক চৌধুরী , সবিতা দে , প্রণব পাল প্রমুখের মুখে ।
গৌরী চক্রবর্তী ভট্টপুকুরের বাপুজী স্কুল পাড়ার স্বামী পরিত্যাক্তা এক অসহায় মহিলা । গৃহ পরিচারিকার কাজ করে সংসার প্রতিপালন করেন তিনি । স্বামী ছেড়ে যাওয়ার পর দীর্ঘ ১২ বছর ধরে ২ ছেলে - মেয়েকে বড় করার তাগিদে জীবন সংগ্রামে রত তিনি । দুটি বাড়িতে গৃহ পরিচারিকার কাজকর্ম করে ৩০০০ টাকা আয় করতেন । সরকারিভাবে ১,০০০ টাকা স্বামী পরিত্যাক্তা ভাতাও পান । বর্তমানে মিলনচক্র এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থেকে ছেলের পড়াশুনার খরচ চালিয়ে সংসার প্রতিপালনে হাপিয়ে উঠেছেন তিনি । ইতিমধ্যে এক পরিবারের গৃহ পরিচারিকার কাজও হারিয়েছেন । এরকম অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রী কোভিড স্পেশাল রিলিফ প্যাকেজের আওতায় খাবার প্যাকেট ও অতিরিক্ত ১,০০০ টাকা আর্থিক পেয়ে তিনি দারুণ খুশী । তিনি বলেন , এই কঠিন সময়ে এই ধরণের সাহায্য পেয়ে এখন অনেকটাই দুশ্চিন্তা মুক্ত ।
কি করে খাবাে , কি ভাবে চলবাে , ছেলেমেয়েদের মুখে কিভাবে খাবার তুলে দেব , করােনা কাফুর সময়ে এই দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন ভট্টপুকুর এলাকারই কাজল গােয়ালা চৌহান । তিন বছর আগে স্বামী মারা যায় ।
দুই কন্যা সন্তান নিয়ে সংসার প্রতিপালনে চরম আর্থিক প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়তে হয় । রাজ্যে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তিনি মাসে ১,০০০ টাকা করে বিধবা ভাতা পাচ্ছেন । বড় মেয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে আগরতলার একটি বেসরকারি সংস্থার কাজে যােগ দিয়েছিল । কিন্তু আয়ের এই সুযােগ করােনা অতিমারির কারণে হারাতে হয় । দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে উঠে কাজল গােয়ালা চৌহানের পরিবার । এরকম এক পরিস্থিতিতে স্থানীয় রেশন ডিলার নিজে উনাকে ডেকে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কোভিড স্পেশাল রিলিফ প্যাকেজ স্কিমের খাদ্য সামগ্রী তুলে দেন । সরকারি এই ধরণের পরিষেবা তাদের স্বপ্নাতীত । উৎসাহিত কণ্ঠে তিনি বলেন , রাজ্য সরকার অসহায় জনগণের পাশে আছেন বলেই সঙ্কটময় পরিস্থিতিতেও আমাদের দুমােঠো অন্নের সংস্থান হয়েছে ।
উত্তম ঘােষ ভাড়ায় রিক্সা চালিয়ে জীবন ধারণ করেন । বর্তমান অতিমারির সময়ে রােজগারের একমাত্র পথ অনেকটাই স্তিমিত । তিনিও পেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী কোভিড স্পেশাল রিলিফ প্যাকেজের মাধ্যমে খাবারের প্যাকেট । সেই সাথে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে ১,০০০ টাকা । তার ভাষায় এই সাহায্য পেয়েছেন বলেই আজ অনেকটা নিশ্চিত তিনি । সরকার পরিবারের সকলের মুখে অন্ন তুলে দেওয়ায় , তিনি বলেন একটি জনদরদী সরকার আমাদের পাশে আছে । বলেই সঙ্কটের মধ্যেও আমার মতাে গরিব , অসহায় মানুষের খাবারের ব্যবস্থা হয়েছে । মুখ্যমন্ত্রী কোভিড স্পেশাল রিলিফ প্যাকেজের মাধ্যমে আজ হাসি ফুটেছে রাজ্যের সমস্ত আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল পরিবারের মুখে ।
জনদরদী আমাদের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর এই পদক্ষেপের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ।
উত্তরমুছুন