আগরতলা, ৩১ অক্টোবর : ভারতের একতা ও সংহতির প্রতীক হলেন সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল। তাঁর দৃঢ় মানসিকতা ও বলিষ্ঠ পদক্ষেপের জন্যই গঠিত হয়েছে বর্তমান ভারত। আজ বিকেলে অরুন্ধতীনগরস্থিত মনোরঞ্জন দেববর্মা স্মৃতি পুলিশ মাঠে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের জন্মদিবস উপলক্ষে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় একতা দিবস অনুষ্ঠানে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা। এই উপলক্ষে মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত সকলকে রাষ্ট্রীয় একতা দিবসের শপথ বাক্য পাঠ করান।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা বলেন, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ভারতের একতা অখন্ডতা রক্ষায় মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। আমৃত্যু তিনি ভারত গড়ার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর ৫৬৫টি রাজন্যশাসিত অঞ্চলকে ভারতের মূল ভূখন্ডের সাথে যুক্ত করানো তাঁর দৃঢ় মানসিকতার পরিচয় বহন করে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দেশকে আরও শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ করে তোলার ক্ষেত্রে দেশবাসীকে অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সাল থেকে সর্দার প্যাটেলের জন্মদিনকে রাষ্ট্রীয় একতা দিবস হিসেবে পালন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এরফলে দেশের যুব সমাজ ভারতের প্রতি অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার মানসিকতায় উদ্বুদ্ধ হয়েছে। অনুষ্ঠানে বিএসএফ, সিআরপিএফ এবং টিএসআর বাহিনীর পুরুষ ও মহিলা জওয়ানরা কুচকাওয়াজ প্রদর্শন করেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী টিংকু রায়, আগরতলা পুরনিগমের মেয়র দীপক মজুমদার, ত্রিপুরা পুলিশের মহানির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন সহ রাজ্য আরক্ষা বাহিনীর বিভিন্ন স্তরের আধিকারিকগণ।
এদিকে স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে এদিন সকালে রাজ্যভিত্তিক রাষ্ট্রীয় একতা দিবসের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া দপ্তর এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এখানে উদ্বোধকের ভাষণে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রী রতন লাল নাথ বলেন, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ছিলেন স্বাধীন ভারতের প্রথম উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। দেশের স্বাধীনতার পর তিনি ভারতীয় ঐক্য তথা ভারতীয় ফেডারেশন তৈরী করার জন্য দেশের অনেকগুলি ছোট ছোট রাজ্যকে ভারত ইউনিয়নের সাথে একত্রিত হতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ২০১৮ সালে কেন্দ্রীয় সরকার গুজরাটে সর্দার প্যাটেলের সন্মানে স্ট্যাচু অব ইউনিটি গড়ে তুলে। যা বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু মূর্তি। কৃষি মন্ত্রী বলেন, তাঁর আদর্শ, চিন্তাধারা ও দর্শনকে বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে কেন্দ্রীয় সরকার ২০১৪ সাল থেকে এই দিনটিকে রাষ্ট্রীয় একতা দিবস পালনের সূচনা করে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের পথ অনুসরণ করে এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত গড়ার প্রচেষ্টা নিয়েছেন। আজ আমাদেরও এই
লক্ষ্যে শপথ নিতে হবে। অনুষ্ঠানে যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া মন্ত্রী টিঙ্কু রায় বলেন, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ছোট ছোট দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতের সাথে অন্তর্ভূক্ত করার জন্য অভাবনীয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতা রক্ষায় আজ আমাদের শপথ নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আত্মনির্ভর ভারত গড়ে তোলার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে আমাদের সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। স্বাগত বক্তব্যে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের সচিব ড. প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী রাষ্ট্রীয় একতা দিবস, মেরি মাটি মেরা দেশ ও ৭৫ সীমান্ত গ্রামের প্রেক্ষাপট সবিস্তারে তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী সান্তনা চাকমা, ত্রিপুরা বিধানসভার উপাধাক্ষ রামপ্রসাদ পাল, বিধায়ক মিনারাণী সরকার, পশ্চিম ত্রিপুরা জিলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাধিপতি হরিদুলাল আচার্য, পর্যটন দপ্তরের সচিব উত্তর কুমার চাকমা, সচিব ড. দেবাশিস বসু, পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক ডা. বিশাল কুমার, এডিজি অনুরাগ ধ্যানকর, এডিজি সৌরভ ত্রিপাঠি, আই জি এল দার্লং, পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার পুলিস সুপার কিরণ কুমার কে. অলিম্পিয়ান দীপা কর্মকার, আগরতলার পুর নিগমের কর্পোরেটরগণ, তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের অধিকর্তা বিম্বিসার ভট্টাচার্য, যুববিষয়ক ও ক্রীড়া দপ্তরের অধিকর্তা সত্যব্রত নাথ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রী রতন লাল নাথ রাষ্ট্রীয় একতা দিবস উপলক্ষে উপস্থিত সবাইকে শপথ বাক্য পাঠ করান।
রাষ্ট্রীয় একতা দিবসের শপথ গ্রহণের পর অনুষ্ঠিত হয় ইউনিটি রান। কৃষিমন্ত্রী রতনলাল নাথ স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে সবুজ পতাকা নেড়ে এই ইউনিটি রানের সূচনা করেন। ইউনিটি রানে টি এস আর, সি আর পি এফ, আসাম রাইফেলস, এন এস এস, সিভিল ডিফেন্স, স্কাউট এন্ড গাইড, ক্রীড়াবিদ, বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের ছাত্রছাত্রীরা অংশ নেয়। ইউনিটি রান স্বামীবিবেকানন্দ ময়দান থেকে রাজধানীর বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে উমাকান্ত একাডেমী মাঠে প্যারেডে এসে সমাপ্ত হয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন