আগরতলা, ০৯ মার্চ : 'বিকশিত ভারত, বিকশিত উত্তর পূর্বাঞ্চল' কর্মসূচিতে আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অরুণাচলপ্রদেশের ইটানগর থেকে ভার্চুয়ালি ৫৫ হাজার কোটি টাকার ৯৫টি বিভিন্ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং ১২৩টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। এর মধ্যে উত্তর পূর্বাঞ্চলের ত্রিপুরা, অরুণাচলপ্রদেশ, নাগাল্যান্ড, মেঘালয়, মণিপুর ও সিকিমে বিভিন্ন প্রকল্প রয়েছে। এ উপলক্ষ্যে রাজ্যের সাব্রুমে নবনির্মিত সাব্রুম স্থলবন্দরে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, 'দেশের সাধারন জনগণের স্বপ্নই আমার স্বপ্ন'। তিনি বলেন, দেশের প্রত্যেকটি নির্বাচিত সুবিধাভোগী পরিবারের জন্য পাকা আবাস, পরিশ্রুত পানীয়জল, বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা, ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদান করাই হল ভারত সরকারের মূল লক্ষ্য। অষ্টলক্ষ্মীর ভাবধারায় দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার শপথ নিয়েই কেন্দ্রীয় সরকার কাজ করছে।
ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালের আগে পূর্বে উত্তর পূর্বাঞ্চলে কেবলমাত্র ১০ হাজার কিলোমিটার জাতীয় সড়ক ছিল। গত প্রায় দশ বছরে আরও ৬ হাজার কিলোমিটার জাতীয় সড়ক তৈরী করা হয়েছে। রেল লাইন তৈরী করা হয়েছে প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার। বৈদ্যুতিকরণে অভূতপূর্ব সফলতা লাভ করা সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি পরিবার প্রধানমন্ত্রীর পরিবার। তাই দেশের উন্নয়নে যেসমস্ত প্রকল্প ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ণ করা হয় তা কেবলমাত্র দেশবাসীর কল্যাণেই করা হয়। গত বছরে উত্তর পূর্বাঞ্চলে এক ডজনের উপর শান্তি চুক্তি করার পাশাপাশি সীমান্ত সমস্যা দূরীকরণে সাফল্য পাওয়া গেছে। আগামীদিনে এই অঞ্চলের শিল্পের বিকাশে কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছে। এসমস্ত প্রকল্প ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ণে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, গত ৫ বছরে উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিকাশে পূর্বের কেন্দ্রীয় সরকারগুলোর তুলনায় প্রায় ৪ গুণ অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। দেশের মহিলাদের ক্ষমতায়ণও কেন্দ্রীয় সরকারের অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র। স্বসহায়ক দল গঠনের মাধ্যমে লাখপতি দিদি তৈরী সহ সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে মহিলাদের অগ্রাধিকার দিয়ে তাদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, আজকের এই অনুষ্ঠানে রাজ্যে ২৪৫৪.৩৯ কোটি টাকার ১১টি প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সাব্রুম স্থলবন্দর, ৭৩২.৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ১.৪৬ লক্ষ বাড়িতে পানীয় জলের সংযোগ, ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪টি বিদ্যালয়ের নতুন ভবন, ৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে রূপাইছড়ি ও করবুকে একলব্য মডেল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল। তাছাড়াও রয়েছে ২২.১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ফটিকসাগর থেকে ছবিমুড়া সংযোগ, ১৫৪.৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে জাতীয় সড়ক ২০৮-এ এর কৈলাসহর-কুর্তির প্রথম অংশ (১১.৮ কিমি), ২৫১.৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে জাতীয় সড়ক ৪৪-এ এর মনু-লালছড়া অংশ (১৬.২৯ কিমি), ৩৪৭.৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে জাতীয় সড়ক ৪৪-এ এর কাঞ্চনপুর-ভাঙমুন অংশ (২০.২৪৮ কিমি), ২১০.৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে জাতীয় সড়ক ১০৮-বি এর আগরতলা-খোয়াই অংশ (১২.৮০ কিমি), ২১৮.২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে জাতীয় সড়ক ২০৮ এর ফুলতলি-জুড়িছড়া অংশ (২০ কিমি) এবং ২০৮.৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে জাতীয় সড়ক ২০৮-এ এর কৈলাসহর-কুর্তির দ্বিতীয় অংশ (১৩.৪৫ কিমি)। প্রধানমন্ত্রী এদিন ভার্চুয়ালি ত্রিপুরায় ৬০৯৫.৭২ কোটি টাকার ১২টি নতুন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। এগুলির মধ্যে রয়েছে ২০২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে আগরতলা শহরের পশ্চিম বাইপাস, ২০২ কোটি টাকা ব্যয়ে আগরতলা সরকারি ডেন্টাল কলেজ ভবন, ১৯০.০১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪টি সড়কের উন্নতি, ১৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে আগরতলা সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ২০০ শয্যা বিশিষ্ট প্রসূতি ও শিশু বিভাগ, ১২১.৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে সিপাহীজলায় নেশামুক্তি ও রিহ্যাব কেন্দ্র, ১৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রধানমন্ত্রী একতা মল, ৮১.০২ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৭৪টি জনজাতি বসতিতে সৌর বিদ্যুতায়ন প্রকল্প, ৬৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সেকেরকোটে নতুন ডিপো, ২৪৮৬.৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ে জাতীয় সড়ক ২০৮ এর খোয়াই-হরিণা অংশের নির্মাণ (১৩৪.৯১৩ কিমি) ইত্যাদি।
সাব্রুম স্থলবন্দরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা বলেন, ২০১৮ সালে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সাথে সাথে রাজ্যের উন্নয়নে এক দুরন্ত গতি এসেছে। খুব শীঘ্রই মৈত্রী সেতু দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হয়ে যাবে। মৈত্রী সেতু চালু হয়ে গেলে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ব্যবহার করে রাজ্য দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার প্রবেশদ্বার হয়ে উঠবে। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হলেন বিকাশ পুরুষ। তাঁর দূরদর্শিতার করণেই আজ ভারত সমগ্র বিশ্বের কাছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমাদৃত হচ্ছে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ল্যান্ড পোর্ট অব অথরিটি অব ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান আদিত্য মিশ্র এবং ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন সচিব কিরণ গিত্যে। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায়, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী সান্ত্বনা চাকমা, পর্যটনমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, ক্রীড়ামন্ত্রী টিংকু রায়, জনজাতি কল্যাণ মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা, সমবায়মন্ত্রী শুক্লাচরণ নোয়াতিয়া, সাংসদ রেবতী ত্রিপুরা এবং মুখ্যসচিব জে কে সিনহা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন