আগরতলা, ২১ আগস্ট : রাজ্যে গত ৭২ ঘন্টা ধরে ভারী ও অবিরাম বৃষ্টিপাতের ফলে বিভিন্ন নদীর জলস্তর ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এতে রাজ্যের অনেক জায়গায় বন্যা দেখা দিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায় ১৮২ মিমি, খোয়াই জেলায় ১৫৭.৬০ মিমি ও গোমতী জেলায় ১৫৩.১০ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় বন্যার ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে গোমতী ও ঊনকোটি জেলা বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে কথা বলেছেন। মুখ্যমন্ত্রী বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবহিত করে রাজ্যে দ্রুত অতিরিক্ত এনডিআরএফ বাহিনী পাঠাতে অনুরোধ করেছেন। এনডিআরএফ'র একটি দল আজ উনকোটি জেলার কৈলাসহরে এসে পৌছাবে এবং আরও ৪টি এনডিআরএফ বাহিনী বিমানে করে আনা হচ্ছে। এই ৪টি বাহিনী আজ রাতের মধ্যে রাজ্যে এসে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। ত্রাণ, পুনর্বাসন ও বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর থেকে আজ সন্ধ্যায় এক প্রেস রিলিজে এই সংবাদ জানানো হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা বুধবার বিকেলে আগরতলার বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকা সহ বিভিন্ন ত্রান শিবির পরিদর্শন করেন। প্রথমেই তিনি ইন্দ্রনগরস্থিত ইন্টিগ্রেটেড কমান্ড এন্ড কন্ট্রোল সেন্টারে যান। সেখানে আগরতলা স্মার্ট সিটি'র কমিশনার শৈলেশ কুমার যাদব আগরতলার বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন। এরপর মুখ্যমন্ত্রী ধলেশ্বরস্থিত স্বামী দয়ালানন্দ বিদ্যানিকেতন স্কুল, রামঠাকুর বালিকা বিদ্যালয়, বড়দোয়ালীর বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দির হাই স্কুলের ত্রান শিবির এবং চন্দ্রপুর বলদাখাল এলাকা পরিদর্শন করেন। মুখ্যমন্ত্রী ত্রাণ শিবিরে বন্যা দুর্গত মানুষদের সাথে কথা বলেন। ত্রান শিবিরে বন্যা দুর্গত মানুষের যাতে কোনও ধরণের অসুবিধা না হয় সেদিকেও নজর রাখতে তিনি আধিকারিকদের নির্দেশ দেন।
পরিদর্শনকালে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে উপস্থিত ছিলেন প্রদেশ বিজেপির সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য্য সহ সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাগণ। বন্য কবলিত এলাকা পরিদর্শনের সময় মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, এই ভারী বর্ষণ ত্রিপুরার জন্য এক বিপর্যয়। এর থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। রাজ্য সরকার এই বিপর্যয় থেকে বেরিয়ে আসতে দিনরাত কাজ করে চলছে। রাজ্য সরকারের সরকারি সমস্ত দপ্তরের কর্মীগণ এবং রাজ্যের মানুষ এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় অক্লান্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিন প্রশাসনিক ভাবেজানানো হয়েছে, রাজ্যের ধলাই, খোয়াই, দক্ষিণ ত্রিপুরা, পশ্চিম ত্রিপুরা, উত্তর ত্রিপুরা এবং উনকোটি জেলার নদীগুলির জলস্তর বিপদসীমার উপরে উঠেছে। এই উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চস্তরে নজরদারি রাখা হয়েছে। রাজ্য প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর পরস্পরের মধ্যে নিবিড় সমন্বয় রেখে নাগরিকদের এই বিপর্যয় থেকে উদ্ধারের জন্য কাজ করছে।
এছাড়াও জানানো হয়েছে, রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় এখন পর্যন্ত ৩৩০টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। এই শিবিরগুলিতে ৩২ হাজার ৭৫০ জন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি আশ্রয় নিয়েছেন। জেলা প্রশাসনগুলি থেকে ত্রাণ শিবিরগুলিতে প্রয়োজনীয় খাবার, পানীয়জল, চিকিৎসা সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাছাড়াও গ্রাম উন্নয়ন, জলসম্পদ, বিদ্যুৎ, পূর্ত (রোড এন্ড বিন্ডিং), বন, আরক্ষা, অগ্নি নির্বাপন ও জরুরী পরিষেবা এবং আধাসামরিক বাহিনীর জওয়ানগণ গত তিনদিন ধরে নিরলসভাবে উদ্ধার ও ত্রাণকার্য চালিয়ে যাচ্ছেন। ভারী ও অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে গত ১৯ আগস্ট থেকে সারা রাজ্যে ১,৯০০টিরও বেশী স্থানে ভূমিধস ঘটেছে। এতে বিভিন্ন সড়ক অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। এই সড়কগুলি নিয়মিতভাবে পরিস্কার করা হচ্ছে। প্রাথমিক রিপোর্টে বাড়ি, গবাদি পশু, পরিকাঠামো ও কৃষিজাত ফসলের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। ক্ষয়ক্ষতির নিরূপনের কাজ শুরু হয়েছে এবং তা দ্রুত সম্পন্ন করা হবে। প্রেস রিলিজে আরও জানানো হয়েছে, এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ১ জন ব্যক্তি এখনও নিখোজ রয়েছেন। এসডিআরএফ'র ২৫০টিরও বেশী ক্যুইক রেসপন্স টিম, এনডিআরএফ, সিভিল ডিফেন্স স্বেচ্ছাসেবক, আপদা মিত্র স্বেচ্ছাসেবক সহ অগ্নি ও জরুরী পরিষেবা, বন, বিদ্যুৎ, পূর্ত, কৃষি ও অন্যান্য দপ্তরের কর্মীগণ ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যে নিযুক্ত রয়েছেন।
এদিকে ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাষ অনুসারে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে আগামীকালও ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। তাছাড়া ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর আজ সারা রাজ্যে রেড এলার্ট জারি করেছে। সেই অনুসারে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জনসাধারণকে সতর্ক থেকে জেলা প্রশাসনের উদ্ধার কাজে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন