আগরতলা, ২০ জুন : রাজ্যের চা বাগানে কর্মরত শ্রমিকদের দৈনিক ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি করা হয়েছে।এক্ষেত্রে চা বাগানের প্রাপ্তবয়স্ক (পুরুষ ও মহিলা) শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১৭৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০৪ টাকা এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক শ্রমিকদের মজুরি ৮৮ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১০২ টাকা করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের এপ্রিল মাস থেকে এই বর্ধিত মজুরি কার্যকর হবে। আজ সচিবালয়ের প্রেস কনফারেন্স হলে এক সাংবাদিক সম্মেলনে শ্রম দপ্তরের মন্ত্রী টিংকু রায় এ সংবাদ জানান। তিনি জানান, ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে চা বাগানের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির হার সর্বশেষ সংশোধিত এবং বৃদ্ধি করা হয়েছিলো।
শ্রমমন্ত্রী টিংকু রায় জানান, সম্প্রতি চা শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি সংশোধনের দাবির ভিত্তিতে রাজ্য সরকার ৪৬-সুরমা বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়িকা স্বপ্না দাস পালের সভাপতিত্বে ৬ মাসের জন্য ১০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। রাজ্যের চা বাগানে কর্মরত শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির হার সংশোধনের সুপারিশ করার সময় এই কমিটিকে সমস্ত দিক বিবেচনা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। কমিটি ন্যূনতম মজুরির হার সংশোধনের সাথে সম্পর্কিত বিদ্যমান সকল ধরণের কাজের ধরণগুলিও বিবেচনা করবে। তদানুসারে উক্ত কমিটি গত ২৮ মে, ২০২৫-এ চা শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি সংশোধনের জন্য বিধায়িকা স্বপ্না দাস পালের সভাপতিত্বে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই আলোচনাসভায় বিশেষ আমন্ত্রিত সদস্য ত্রিপুরা চা উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান সমীর রঞ্জন ঘোষ, আমন্ত্রিত সদস্য সুরমা ভ্যালি শাখা ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের সচিব সঞ্জয় বাগচি এবং কে. কে. নগর টি.এস.এস.এস. লিমিটেডের সভাপতি জয়দেব সরকার উপস্থিত ছিলেন। উক্ত কমিটি সার্বিক দিক বিবেচনা করে রাজ্যের শ্রমিকদের স্বার্থে ন্যূনতম মজুরির হার ১৬ শতাংশ বৃদ্ধি করার সুপারিশ করেছে। পরবর্তী পর্যায়ে উক্ত সুপারিশমূলে রাজ্য সরকার চা বাগানে কর্মরত শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির অনুমোদন দিয়েছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে শ্রমমন্ত্রী আরও জানান, বর্তমান রাজ্য সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাজ্যের চা বাগানের শ্রমিকদের মৌলিক চাহিদাগুলি পূরণে নিরন্তর কাজ করছে। শ্রমিকদের বাসস্থান, পানীয়জল, শৌচালয়, বিদ্যুৎ ইত্যাদি সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। রাজ্যের চা বাগানগুলিতে কর্মরত ৬ হাজার ৫৮৫টি চা শ্রমিক পরিবারের মধ্যে ৩ হাজার ১৬৬টি চা শ্রমিক পরিবারকে জমির পাট্টা দেওয়া হয়েছে। চা বাগানে বসবাসকারী ৪৯২২টি চা শ্রমিক পরিবারকে ইতিমধ্যে প্রায়োরিটি গ্রুপ রেশন কার্ড দেওয়া হয়েছে। তাছাড়াও রাজ্যের সমস্ত চা বাগানে কর্মরত চা শ্রমিক পরিবারদের প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার আওতায় আনা হচ্ছে। রাজ্যে প্রায় ১৫ হাজার প্রত্যক্ষ চা শ্রমিক রয়েছেন বলে শ্রমমন্ত্রী জানান।
সাংবাদিক সম্মেলনে ত্রিপুরা চা উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান সমীর রঞ্জন ঘোষ জানান, রাজ্যে ৫২টি চা বাগান রয়েছে। এরমধ্যে সমবায় পরিচালিত ১১টি, ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ৩৬টি এবং ৫টি রয়েছে ত্রিপুরা চা উন্নয়ন নিগমের আওতায়। তিনি জানান, ২০১৮ সালে রাজ্যে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে গত ৭ বছরে চা বাগানের শ্রমিকদের দৈনিক ন্যূনতম মজুরি প্রায় ৯৪ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে। রাজ্যের টি অকশন সেন্টারটি চলতি অর্থবছরে চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সাংবাদিক সম্মেলনে বিধায়িকা স্বপ্না দাস পাল এবং শ্রম দপ্তরের সচিব টি. কে. দেবনাথ উপস্থিত ছিলেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন