আগরতলা, ৫ ফেব্রুয়ারি : ল্যান্ড লকড ত্রিপুরা আজ ল্যান্ড লিঙ্কড রাজ্যে পরিণত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহার নেতৃত্বে ত্রিপুরা দ্রুত উন্নয়ন ও কল্যাণকারী রাজ্য হিসেবে এগিয়ে চলেছে। রাজ্যে বর্তমান সরকারের ৭ বছরের শাসনকালে বিগত সরকারগুলির ৩৫ বছরের শাসনকালের চাইতে অনেক বেশি উন্নয়ন হয়েছে। আজ স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে অফার অব অ্যাপয়েন্টমেন্ট বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ একথা বলেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নয়াদিল্লি থেকে ভার্চুয়ালি এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য দপ্তরের ৩৬৯টি ফার্মাসিস্ট ও ল্যাব টেকনেশিয়ান পদে এবং রাজ্য সরকারের ৩৭টি দপ্তরে জেআরবিটি কর্তৃক ২,৪৩৭টি মাল্টি টাস্কিং স্টাফের অফার অব অ্যাপয়েন্টমেন্ট বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রতীকি হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী সহ উপস্থিত মন্ত্রিসভার সদস্যগণ ৯ জনের হাতে অফার অব অ্যাপয়েন্টমেন্ট তুলে দেন। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা সহ কৃষিমন্ত্রী রতনলাল নাথ, অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায়, শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী সান্তনা চাকমা, পর্যটনমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, জনজাতি কল্যাণমন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা, তপশিলি জাতি কল্যাণমন্ত্রী সুধাংশু দাস, সমবায়মন্ত্রী শুক্লাচরণ নোয়াতিয়া, মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, মুখ্যমন্ত্রীর সচিব ড. পি কে চক্রবর্তী উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চল সামগ্রিক বিকাশের পথে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। আজ উত্তর পূর্বাঞ্চল সারা দেশে বিকাশ, উন্নত যোগাযোগ ও পরিকাঠামো, শিক্ষা ব্যবস্থা, কৃষি ব্যবস্থা ও বিনিয়োগের জন্য পরিচিতি পেয়েছে। গত ১০ বছরে উত্তর পূর্বাঞ্চলের ইতিবাচক উন্নয়নের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীগণ বহুবার এই অঞ্চল সফর করেছেন। যা বিগত সরকারগুলির সময় অকল্পনীয় ছিলো। কেন্দ্রীয় সরকার ত্রিপুরা তথা উত্তর পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নে বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে।
ইতিমধ্যে ত্রিপুরা রাজ্যে শান্তি স্থাপনের লক্ষ্যে বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে তিনটি চুক্তি সম্পাদন করা হয়েছে। আজ রাজ্যে কোনও বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী সক্রিয় নেই। তিনি আরও বলেন, রাজ্যে ব্লু শরণার্থীদের স্থায়ী বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবা ও রোজগারের ব্যবস্থা করে দীর্ঘমেয়াদি এই সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনুষ্ঠানে যাদেরকে অফার বিতরণ করা হয়েছে তাদের উদ্দেশ্যে রাজ্য ও দেশের উন্নয়নে সম্পূর্ণ নিয়োজিত হয়ে কাজ করার জন্য আহ্বান জানান। তিনি মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহাকে স্বচ্ছতার সঙ্গে যোগ্যতার ভিত্তিতে সকলকে চাকরি প্রদান করার জন্য ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা বলেন, কর্মচারিরা হচ্ছেন প্রশাসনের মূল চালিকা শক্তি। সরকারের নীতি, নির্দেশিকা, জনকল্যাণে গৃহীত কর্মসূচিকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে কর্মচারিদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে যে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন সেই লক্ষ্য নিয়ে রাজ্য সরকারও কাজ করছে। এক্ষেত্রে কর্মচারিদেরও দৃঢ় মানসিকতা ও সামাজিক দায়দায়িত্ব নিয়ে কাজ করা প্রয়োজন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আজ স্বাস্থ্য দপ্তরে ফার্মাসিস্ট ও ল্যাব ট্যাকনেশিয়ান পদে আরও ৩৬৯ জনকে বিভিন্ন পদে আজ অফার অব অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়াও জেআরবিটি'র মাধ্যমে রাজ্য সরকারের ৩৭টি দপ্তরে ২,৪৩৭ জন মাল্টি টাস্কিং স্টাফ পদে অফার অব অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেওয়া হচ্ছে। যা রাজ্যের ইতিহাসে নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার স্বচ্ছতার সাথে স্বচ্ছ নিয়োগ নীতি প্রণয়ন করে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে। টেট, জেআরবিটি ও টিপিএসসি'র মাধ্যমে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে বিভিন্ন পদে নিয়োগ করা হচ্ছে। যোগ্য মেধাবীরা যাতে বঞ্চিত না হয় সেদিকে সরকারের নজর রয়েছে। দলীয় আনুগত্যকে প্রাধান্য না দিয়ে মেধা ও যোগ্যতাকেই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে। স্বচ্ছভাবে গ্রুপ-সি ও গ্রুপ-ডি পদে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচনের জন্য জেআরবিটি গঠিত হয়েছে। এর মাধ্যমে গ্রুপ-সি এলডি ক্লার্ক, এগ্রি অ্যাসিস্টেন্ট ইত্যাদি পদে ১,৯৮০ জনকে নির্বাচিত করা হয়েছিল এবং ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে তাদের নিয়োগ করা হয়েছে। রাজ্যের যুবক যুবতীরা যাতে রাজ্যে চাকরি পেতে পারেন তার জন্য সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে পিআরটিসি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষ থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ১৬,৪৫ ১ জনকে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে নিয়োগ করা হয়েছে। টিআরবিটি, জেআরবিটি ও টিপিএসসি ছাড়াও নিয়োগ নীতি মেনে বিভিন্ন দপ্তরে নিয়োগ করা হয়েছে। ত্রিপুরা শিল্প উন্নয়ন নিগমের মাধ্যমে গত ৩ বছরে রাজ্যের শিল্পাঞ্চলগুলিতে ১,৬১৭টি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে মুখ্যমন্ত্রী দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্প চালু করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে শ্রমমন্ত্রী টিংকু রায় বলেন, আজকের দিনটি রাজ্যের জন্য গৌরবপূর্ণ একটি দিন। ২০১৮ সালে রাজ্যে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর রাজ্যের যুবাদের কর্মসংস্থান এবং মহিলাদের আত্মনির্ভরতার লক্ষ্যে নিরন্তর কাজ করে চলেছে। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন মুখ্যসচিব জে কে সিনহা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন