আগরতলা, ০৫ আগস্ট : গণ আন্দোলনের চাপে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। স্থানীয় সময় বেলা আড়াইটা নাগাদ সামরিক হেলিকপ্টারে ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে শেখ হাসিনা ভারতের উদ্দেশে রওনা হন তিনি। বর্তমানে তিনি উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদ এর ইন্দোরে অবস্থান করছেন বলে খবর।
বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকর-উজ-জামান জাতির উদ্দেশে ভাষণে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। রাজনৈতিক এই ক্রান্তিকালে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হবে। বিচার হবে সব হত্যার। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা খুবই ভালো হয়েছে বলেও জানান সেনা প্রধান। সংঘাত থেকে বিরত থাকার আবেদন জানিয়ে জেনারেল ওয়াকর উজ-জামান বলেন, দেশে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা এখন তাঁদের প্রধান কর্তব্য।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন দুপুরে বিক্ষোভকারীদের দখলে চলে যায়। গণভবনে ঢুকে জনতাকে তাণ্ডব চালাতে দেখা যায়। এমনকি ভবনের আসবাবপত্র, গৃহপালিত জন্তু সহ সমস্ত কিছু লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়। আওয়ামি লীগের ঢাকা জেলা কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা। ধানমন্ডীতে শেখ হাসিনার কার্যালয়েও আগুন ধরানো হয়। ধানমন্ডীতেই হামলা চালানো হয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাড়িতে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি ভাঙতেও দেখা যায় আন্দোলনকারীদের। এবছরই ১১ ই জানুয়ারি চতুর্থবারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছিলেন আওয়ামি লীগ প্রধান শেখ হাসিনা। তবে সেই নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকা সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত গত মাসে উত্তাল হয়ে ওঠে। হিংসায় নিহত হন ২০০ জনের বেশি। সুপ্রিম কোর্টে সংরক্ষণের হার ৭ শতাংশে নামিয়ে আনার পরেও আন্দোলন থামেনি। নির্বিচার হত্যা এবং ধরপাকড়ের প্রতিবাদে শুরু হয় ছাত্রদের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে এই আন্দোলন ক্রমশ পরিণত হয় গণ আন্দোলনে। অসহযোগ কর্মসূচীর কথা ঘোষণা করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর পর থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পারেই দেশের শাসনভার নিজ হাতে তুলে নেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকর-উজ-জামান। জাতির উদ্দেশে ভাষণে তিনি জানান, রাজনৈতিক এই ক্রান্তিকালে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হবে। বিচার হবে সব হত্যার। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা খুবই ভালো হয়েছে বলেও জানান সেনা প্রধান। সংঘাত থেকে বিরত থাকার আবেদন জানিয়ে জেনারেল ওয়াকর উজ-জামান বলেন, দেশে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা এখন তাঁদের প্রধান কর্তব্য।
বাংলাদেশের এই অস্থির পরিস্থিতিতে সীমান্তে করা নিরাপত্তা গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ প্রবেশে ভারতীয় নাগরিকদের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করলো ভারত সরকার। তারপরেও এদিন দুপুরে বাংলাদেশ থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নাগরিকরা আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে রাজ্যে প্রবেশ করে। তাদের চোখে মুখে ছিল আতঙ্কের ছাপ । রাতে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহার বাসভবনের জরুরী বৈঠক বসে। উপস্থিত ছিলেন রাজ্য পুলিশের ডিজিপি অমিতাভ রঞ্জন সহ সিআরপিএফ, আসাম রাইফেলস ও বিএসএফের শীর্ষ আধিকারিকরা।
অপরদিকে শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় সোমবার দুপুরে এক ভিডিও বার্তায় জানালেন, কোটা আন্দোলনের পক্ষেই ছিল আওয়ামী লীগ সরকার । কিন্তু ছাত্ররা এবং একাংশ সুবিধাবাদীরা শেষ পর্যন্ত এই বিষয়টাকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসবাদে নেমে পড়ল। এক্ষেত্রে গভীর চক্রান্ত ছিল। সাধারণ মানুষের বাড়ি ঘরে আগুন দেওয়া হয়েছে। বহু পুলিশ সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন