ক্রীড়া প্রতিনিধি, ১৯ ডিসেম্বর : ৩৬ বছর পর আবার বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা । ফাইনালে আর্জেন্টিনা পেনাল্টি শুট আউটে ৪-২ গোলে গতবারের বিজয়ী ফ্রান্সকে হারিয়ে তৃতীয়বারের বিশ্ব সেরার স্বীকৃতি পেয়েছে। আর্জেন্টিনার হয়ে লিওনেল মেসি দুটি, ডি মারিয়া একটি গোল করেন। ফ্রান্সের কিলিয়ান এমবাপে হ্যাটট্রিক করে গোল্ডেন বুট জয় করে নিলেন ফ্রান্সের কিলিয়ান এমবাপে। ৭ গোল করেও মেসি জিততে পারলে না প্রেস্টিজিয়াস পুরস্কারটি। এই বিশ্বকাপে স্বর্ণের বুট পেলো কিলিয়ান এমবাপে একই সঙ্গে স্বর্ণের ফুটবল উঠে এলো মেসির হাতে। ফাইনাল ম্যাচের শুরু থেকে আর্জেন্টিনার দাপট দেখতে পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু, মাত্র দুই মিনিটে ম্যাচের রং একেবারে বদলে দিলেন এমবাপে।
খেলার প্রথম ৯০ মিনিটের প্রথমার্ধে পেনাল্টি পেয়ে জয় শুরু হয় আর্জেন্টিনার। পর পর দুইটি গোল দিয়ে জয় নিয়ে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। শেষ মুহূর্তে প্রায় পাঁচ মিনিটের মধ্যে দুইটি গোল দিয়ে সমতা ফেরায় ফ্রান্স। শেষ দিকে পেনাল্টি পায় ফ্রান্স ফুটবল দল। এই শটটি দলের তারকা ফুটবলার কিলিয়ান এমবাপে নেন। কিন্তু এমবাপের শট তিনি আটকাতে পারেননি। আর এভাবেই গোল করে ফ্রান্স এই ম্যাচে প্রত্যাবর্তন করে। এমবাপের এই গোলের ক্ষেত্রে অ্যাসিস্ট করেছিলেন মার্কাস থুরাম। অনেকেই বলতে শুরু করেন যে লিওনেল মেসি এবং বিশ্বকাপের মাঝে কাঁটা হয়ে উঠেছেন সেই কিলিয়ান এমবাপে।
বছর চারেক আগে রাশিয়ার মাটি থেকে এই ফ্রান্সের কাছে হেরেই চোখের জল ফেলতে ফেলতে বিদায় নিতে হয়েছিল আর্জেন্টিনাকে। এবার চার বছর পর দেখার ছিল আর্জেন্টিনা হিসেবে বদলাতে পারে, নাকি পরপর দুবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়ে ৬০ বছর আগের রেকর্ড স্পর্শ করে ফ্রান্স। দোহার মাঠে অবশ্য ম্যাচের শুরু থেকেই দাপট বেশি ছিল আর্জেন্টিনার। নিজেদের দখলে বল রেখে মাটিতে অসংখ্য পাস খেলে চলেছিল নীল সাদা জার্সিধারীরা।
তবে এইবারের বিশ্বকাপের ইতিহাসে অন্যতম রুদ্ধশ্বাস ফাইনালের সাক্ষী থাকলেন ফুটবলপ্রেমীরা। লুসাইল স্টেডিয়ামে প্রথমার্ধে লিওনেল মেসি ও আনহেল দি মারিয়ার গোলের লড়াই সকলকে আরো উত্তেজিত করে তোলে। টাইব্রেকারে প্রথম শটে এমবাপে গোল করার পর লিওনেল মেসিও গোল করেন। ফ্রান্সের দ্বিতীয় শটটি নিতে গিয়েছিলেন কিংস্লে কোমান। তাঁর শট রুখে দেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেজ। এরপর দিবালা আর্জেন্টিনার ব্যবধান বাড়ান। এরপর চুয়ামেনি শট বাইরে মেরে বসেন। ১৯৮৬ সালের পর প্রথমবার শিরোপা জিতল আর্জেন্টিনা। অবসান ঘটল ৩৬ বছরের দীর্ঘ অপেক্ষার। মেসি এবং এমবাপে দু'জনই বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলতে নেমেছিলেন ৫টি করে গোল নিয়ে। ম্যাচের ২৩ মিনিটেই পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন মেসি। সে সঙ্গে নিজের গোলও বাড়িয়ে নেন ৬টিতে। দ্বিতীয়ার্ধে এসে এক মিনিটেরও কম ব্যবধানে জোড়া গোল করে বসেন এমবাপে। একটি পেনাল্টি থেকে। অন্যটি করেন দুর্দান্ত এক প্লেসিং শটে। সে সঙ্গে এমবাপের গোল হয়ে যায় ৭টি। মেসির ৬টি। খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। এই অর্ধে এসে লিওনেল মেসি একদুর্দান্ত গোল করেন। সমান হয়ে যায় দু'জনের গোল। এরপর অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয় অংশে আবারও পেনাল্টি পেয়ে যায় ফ্রান্স। শটনেন এমবাপে। গোল, হ্যাটট্রিক। সেই সঙ্গে তাঁর গোল হয়ে যায় ৮টি।
২০২২ ফিফা বিশ্বকাপের ট্র্যাজিক হিরো' যদি কাউকে বলতেহয়,তাহলে সবার আগে উঠেআসবে কিলিয়ান এমবাপের নাম। ২০১৮ সালে ফ্রান্স যখন বিশ্বজয় করেছিল, সেইসময় দলের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন এই এমবাপে। এবারও সেই সুযোগ এসেছিল। কিন্তু, শেষপর্যন্ত স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল। বিশ্বকাপের শেষরাতে নায়কহয়ে উঠলেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। আর মহাভারতের সেই কর্ণ রয়ে গেলেন কিলিয়ান এমবাপে।
Congratulations to France for a spirited performance at the #FIFAWorldCup! They also delighted Football fans with their skill and sportsmanship on the way to the finals. @EmmanuelMacron
— Narendra Modi (@narendramodi) December 18, 2022
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ফুটবলে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান আর্জেন্টিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে তারা অসাধারণ খেলেছে বলেও প্রধানমন্ত্রীর অভিমত। শ্রী মোদী বলেন, বিশ্বকাপের ফাইনাল, অন্যতম সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ফুটবল ম্যাচ হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বিশ্বকাপে ভালো পার্ফর্মেন্সের জন্য তিনি ফ্রান্সকে’ও, অভিনন্দন জানিয়েছেন। দক্ষতা এবং খেলোরাড়চিত মনোভাবের যে পরিচয় তারা দিয়েছে, তাতে ফুটবল প্রেমীরা আপ্লুত বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন