আগরতলা, ০৫ সেপ্টেম্বর : মঙ্গলবার আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে শিক্ষক দিবসের রাজ্যভিত্তিক অনুষ্ঠানে শিক্ষা ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য এই বছর বিশিষ্ট শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিভিন্ন সম্মানে সম্মানিত করা হয়। এছাড়াও শ্রেষ্ঠত্বের নিরীখে বিভিন্ন বিদ্যালয়কে পুরস্কৃত করা হয়। এ বছর (২০২৩) পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সম্মাননা দেওয়া হয়েছে বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. কনক নারায়ণ ভট্টাচার্য্য এবং চিকিৎসার সাথে যুক্ত অন্যান্য সহকর্মীদের। মহারাজা বীরবিক্রম কিশোর মাণিক্য সম্মানে (মরণোত্তর) ভূষিত করা হয় বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও প্রাক্তন মন্ত্রী প্রয়াত নগেন্দ্র জমাতিয়াকে। তাঁর পক্ষে এই সম্মান গ্রহণ করেন পুত্র ডঃ কাহামানুক জমাতিয়া। মহারানী তুলসীবতী সম্মান প্রদান করা হয় বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব সহিষ্ণু জমাতিয়াকে। ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী সম্মান দেওয়া হয় বিশিষ্ট সমাজসেবী ভীষ্ম গুপ্তকে। সকলের হাতে এই সম্মাননা তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা।
তাছাড়াও অনুষ্ঠানে ২৪ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে শিক্ষক সম্মাননা-২০২৩ প্রদান করা হয়। এরা হলেন আগরতলার মহারাজা বীরবিক্রম মহাবিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. আশীষ মিত্র, টি আই টি'র অধ্যাপিকা ড. ঝুনু দেববর্মা, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জহরলাল সরকার, প্রধান শিক্ষক উত্তম দেববর্মা, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুকমল কান্তি দাস, স্নাতকোত্তর শিক্ষিকা সহেলী দত্ত রায় ঘোষ, স্নাতকোত্তর শিক্ষক গোপাল দাস, স্নাতকোত্তর শিক্ষক সুকুমার সেন, স্নাতকোত্তর শিক্ষক অজয় ত্রিপুরা, স্নাতকোত্তর শিক্ষিকা সীমা ভট্টাচার্য, প্রধান শিক্ষক (প্রাথমিক বিভাগ) রঞ্জিত চন্দ্র দাস, প্রধান শিক্ষক (প্রাথমিক বিভাগ) দুলাল চক্রবর্তী, সহকারি শিক্ষিকা সীমা ভট্টাচার্য, স্নাতক শিক্ষিকা মাধুরী দেবনাথ, স্নাতক শিক্ষক দীপন রায়, স্নাতক শিক্ষক অমল বিশ্বাস, স্নাতক শিক্ষক শুকদেব গোস্বামী, স্নাতক শিক্ষিকা অপর্ণা সেন, প্রাথমিক শিক্ষক তাপস আচার্য, প্রাথমিক শিক্ষিকা সুমিতা রায়, প্রাথমিক শিক্ষক ক্ষিতীশ চন্দ্র ঘোষ, প্রাথমিক শিক্ষক অপূর্ব বসাক, ককবরক শিক্ষক কৃষ্ণরাম রিয়াং, সিনিয়র শারীর শিক্ষিকা সীমা সাহা।
এদিন শিক্ষক দিবসের রাজ্যভিত্তিক অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিভাগে শ্রেষ্ঠত্ব নিরীখে বর্ষসেরা ৯টি বিদ্যালয়কে এবং ২টি মহাবিদ্যালয়কে শ্রেষ্ঠত্বের সম্মান প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডাঃ) মানিক সাহা, যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া দপ্তরের মন্ত্রী টিংকু রায়, আগরতলা পুরনিগমের মেয়র দীপক মজুমদার সহ অতিথিগণ পুরস্কারপ্রাপকদের হাতে সম্মাননা ও পুরস্কার তুলে দেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী সহ উপস্থিত অতিথিগণ মহান দার্শনিক ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ অপর্ণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
৬২তম রাজ্যভিত্তিক শিক্ষক দিবস অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা বলেন, প্রতিটি মানুষের মধ্যেই শিক্ষক হওয়ার প্রবণতা থাকে। একজন শিক্ষকই পারেন শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করতে। শিক্ষক শিক্ষিকাদের শিক্ষাদান ও তাদের উপদেশ শিক্ষার্থীদের মনের গভীরে রেখাপাত তৈরী করে, যা ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতে এগিয়ে যাওয়ার পথকে সুগম করে। রাজ্যের ছেলে মেয়েদের প্রতিভা কোনও অংশেই কম নয়। শিক্ষক শিক্ষিকাদের গতানুগতিক শিক্ষাদানের পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষার সঙ্গে জড়িত বিষয়গুলিকেও বিদ্যালয়ের পাঠদানে গুরুত্ব দিতে মুখ্যমন্ত্রী আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তব্যকে উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যাদের কাছে জ্ঞান থাকবে আগামীদিনে পুরো পৃথিবী তাদের মুঠোয় থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক প্রচেষ্টায় প্রায় ৩৪ বছর পর শিক্ষা ব্যবস্থাকে বাস্তবের সাথে মিল রেখে দেশে নতুন জাতীয় শিক্ষা নীতি চালু করা হয়েছে। রাজ্যেও এই শিক্ষা নীতি কার্যকর করা হচ্ছে।
শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, রাজ্যে শিক্ষার উন্নয়নে পিএম শ্রী প্রকল্পে প্রতিটি ব্লকে একটি করে মডেল স্কুল স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। বর্তমান অর্থবছরের বাজেটে এজন্য ৫০ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সমাজের দুর্বল ও অনগ্রসর ছাত্রছাত্রীদের অনলাইনে ভর্তির আবেদনের সুবিধার জন্য একটি ওয়েব এপ্লিকেশন পোর্টাল তৈরী করা হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজ্য সরকার ছাত্রীদের মধ্যে ৪৪ হাজার ৬০০টি বাইসাইকেল বিতরণ করেছে। ছাত্রীদের সাইকেল দেওয়ার প্রকল্পটি চলতি অর্থবছরেও চালু থাকবে। এজন্য ৯ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, 'মুখ্যমন্ত্রী কন্যা আত্মনির্ভর যোজনা' নামে একটি নতুন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে যার মাধ্যমে দ্বাদশ শ্রেণী পরীক্ষায় প্রথম ১০০ জন স্থানাধিকারী মেয়েদের বিনামূল্যে স্কুটি দেওয়া হবে। পিএমশ্রী ও বিদ্যাজ্যোতি প্রকল্পে ৪০০টি সরকারি বিদ্যালয়কে আধুনিকীকরণ করা হবে। যুব সম্প্রদায়কে দেশ সেবায় উৎসাহিত করার জন্য রাজ্য সরকার প্রত্যেকটি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ত্রিপুরা অগ্নিবীর কর্মসূচি চালু করতে যাচ্ছে। যাতে তারা অগ্নিপথ প্রকল্পে অংশগ্রহণ করে দেশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে পারে।
অনুষ্ঠানে যুব বিষয়ক ও ক্রীড়ামন্ত্রী টিংকু রায় বলেন, ভারতবর্ষ এখন দ্রুততার সাথে উন্নতির পথে এগিয়ে চলেছে। দেশের ছেলেমেয়েরা নিজস্ব উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এখন বিভিন্ন সম্পদ নির্মাণ করছেন, যা একসময়ে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হত। এটাই হচ্ছে পরিবর্তিত ভারত। অনুষ্ঠানে আগরতলা পুর নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার উন্নত রাষ্ট্র ও সমাজ নির্মাণে শিক্ষক সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বর্তমানে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। অনুষ্ঠানে এছাড়া বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের বিশেষ সচিব রাভেল হেমেন্দ্র কুমার, স্বাগত বক্তব্য রাখেন মধ্যশিক্ষা অধিকর্তা এন সি শর্মা। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন বুনিয়াদি শিক্ষা অধিকারের অধিকর্তা শুভাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানে শিক্ষা সমাচার নামে একটি স্মরণিকার আবরণ উন্মোচন করেন মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিধিগণ।
Dr Manik Saha : আগরতলা শহরে সরকারি ভবন ও বেশ কয়েকটি নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করলেন মুখ্যমন্ত্রী
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন