আগরতলা, ২৫ নভেম্বর : মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা শুক্রবার আগরতলার একটি বেসরকারী হোটেলে ভারত সরকারের সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রকের উদ্যোগে আয়োজিত দু'দিনের আঞ্চলিক কর্মশালার উদ্বোধন করেন। সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন দপ্তরের আইন, নিয়মাবলী ও প্রকল্প বাস্তবায়নের উপর এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। রাজ্য সরকারের সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত এই আঞ্চলিক কর্মশালায় ত্রিপুরা সহ লাদাখ, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখন্ড, হিমাচল প্রদেশ, চন্ডীগড়, বিহার, ঝাড়খন্ড, পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম, আসাম, অরুণাচল প্রদেশ, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, মণিপুর রাজ্যগুলির প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। কর্মশালার উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা বলেন, সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন দপ্তরের আইন, নিয়মাবলী সহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের উপর দু'দিনব্যাপী কর্মশালার আয়োজন রাজ্যের জন্য অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। রাজ্য সরকারও রাজ্যের তপশিলি জাতি, অন্যান্য পশ্চাদপদ জাতি ও প্রবীণ নাগরিকদের কল্যাণে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্পগুলো যথাযথভাবে রূপায়ণ করছে। মুখ্যমন্ত্রী তথ্য সহ বলেন, রাজ্য সরকারের সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের মাধ্যমে 'ইমপ্লিমেন্টেশন অব মেন্টেনেন্স এন্ড ওয়েলফেয়ার অব পেরেন্ট এন্ড সিনিয়র সিটিজেন অ্যাক্ট-২০০৭ রাজ্যে ২০০৮ সাল থেকে বাস্তবায়িত হচ্ছে। রাজ্যের ৮টি জেলা ও ২৩টি মহকুমায় এই আইন কার্যকর রয়েছে। অবহেলিত ব্যাঙ্ক নাগরিকদের আশ্রয়ের জন্য রাজ্যে ৪টি বৃদ্ধাশ্রম রয়েছে। সেগুলো হল মহাত্মা গান্ধী মেমোরিয়াল বৃদ্ধাশ্রম যা সরকার: পরিচালিত এবং এন জি ও পরিচালিত আপনাঘর ভন্ড এইজ হোম, অভয়াশ্রম এন্ড এইজ হোম এবং প্রান্তিক ওন্ড এইজ হোম।
কর্মশালায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ইন্টেগ্রেটেড প্রোগ্রাম ফর সিনিয়র সিটিজেন প্রকল্পের সোসাইটিস রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট-১৮৬০'র অধীনে নথিবদ্ধ রাজ্যের বিভিন্ন এজেন্সি ও এন জি ও দের সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রক থেকে বিভিন্ন সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। রাজ্যের ৩টি এন জি ও পরিচালিত বৃদ্ধাশ্রমও এই প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা পাচ্ছে। তৃতীয় লিঙ্গ ব্যক্তিদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায় কেন্দ্রীয় সরকার 'দ্যা ট্রান্সজেন্ডার পার্সনস (প্রোটেকশন অব রাইটস আরি) ২০১৯ এন্ড দ্যা ট্রান্সজেন্ডার পার্সনস (প্রোটেকশন অব রাইটস) রুলস, ২০২০' প্রণয়ন করেছে। রাজ্যেও এই আইনের মাধ্যমে তৃতীয় লিঙ্গদের প্রতি বৈষম্য দূরীকরণ, পরিচয় স্বীকৃতি, বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রকল্প রূপায়ণ এবং তৃতীয় লিঙ্গদের জন্য ওয়েলফেয়ার বোর্ড গঠনের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকার মাদক ব্যবহার রোধে শুরু থেকেই গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। নেশার হাত থেকে খুব সম্প্রদায়কে রক্ষার জন্য তৃণমূল স্তর পর্যন্ত সচেতনতামুলক প্রচারাভিযান চালানো হচ্ছে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য দপ্তর, ক্রীড়া দপ্তর সহ অন্যান্য দপ্তরও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে।
কর্মশালায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের তপশিলি জাতিভুক্ত জনগণের আর্থিক ও সামাজিক মানোন্নয়নে রাজ্য সরকারের তপশিলি জাতি কল্যাণ দপ্তর বিভিন্ন কর্মসূচি রূপায়ণ করছে। মুখ্যমন্ত্রী তথ্য সহ বলেন, রাজ্যের তপশিলি জাতিভুক্ত ছাত্রছাত্রীদের ৩৬টি হোস্টেলের সংস্কার বাবদ ৪.১২.১৭ লক্ষ টাকা বায় করা হয়েছে। ড্রপ আউট হ্রাস করতে এবং বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে ৩২ হাজার ৩২৯ জন শিক্ষার্থীকে প্রি-মেট্রিক স্কলারশিপ হিসেবে ১৭০.০৫ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়েছে। তিনি বলেন, ক্ষুদ্র ব্যবসা, মৎস্য চাষ, উদ্যান পালন, কৃষি ও প্রাণী পালন ইত্যাদি বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে রোজগারের লক্ষ্যে ৫৭ হাজার ৩১৯ জন সুবিধাভোগীকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। তপশিলি জাতি অধ্যুষিত গ্রামগুলিতে সোলার লাইট বসানো, কমিউনিটি হল নির্মাণ, রাস্তা, পানীয়জন সহ বিভিন্ন পরিকাঠামো উন্নয়নে ১৩৯৬০২ লক্ষ টাকা বাঘ করা হয়েছে। ২ হাজার ১০৪ জন তপশিলি জাতিভুক্ত বেকারকে ভাল ডেভেলপমেন্টের উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এরজন্য ৬৪৬৯৩ লক্ষ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আদর্শ গ্রাম যোজনায় নির্বাচিত ৩০টি গ্রামে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিদ্যুৎ, পানীয়জন ইত্যাদি ক্ষেত্রে পরিকাঠামোগত উন্নয়নে ১৩৮৭.৪০ লক্ষ টাকা রাজ্য সরকার বায় করেছে।৬৭ হাজার ২৫৭ জন ছাত্রছাত্রীকে ১৩৩৫৫৮৭ লক্ষ টাকা বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। বাবু জগজীবন রাম ছাত্রাবাস যোজনায় রাজ্যে এটি ছাত্রাবাস নির্মাণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার অনুমোদন প্রদান করেছে। এছাড়াও ক্ষুদ্র ব্যবসা, মৎস্য, পরিবহণ ক্ষেত্রে ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য ৪ হাজার ১৬১ জনকে ভর্তুকীতে ঋণ প্রদান করা হয়েছে।
কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক বলেন, সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রকের যে সমস্ত প্রকল্প রয়েছে তার সুফল সমাজের অন্তিম ব্যক্তির নিকট পৌঁছে দিতে সরকার গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। অনগ্রসর জাতি ভ অন্যান্য পশ্চাদপদ জাতির শিক্ষা ও আর্থিক মানোন্নয়নে কেন্দ্রীয় ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্পগুলোকে আরও কিভাবে কার্যকর করা যেতে পারে তা এই কর্মশালায় আলোচনা করা হবে। যে রাজ্যগুলি অনগ্রসর জাতি ও অন্যান্য পশ্চাদপদ জাতির কল্যাণে ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্পগুলো রূপায়ণে ভালো কাজ করছে তা তারা এই কর্মশালায় তুলে ধরবে। ফলে ত্রিপুরা রাজ্যও এ বিষয়ে উপকৃত হতে পারবে। তিনি বলেন, অনগ্রসর জাতি ছাত্রছাত্রীদের স্টাইপেন্ড যথা সময়ে পৌঁছানোর উপর সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন রাজ্যগুলোকেও এই কাজটি সময়ের মধ্যে কার্যকর করার উপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। পাশাপাশি প্রবীণ নাগরিকদের জীবন কিভাবে আরও সুগমা ও সহজ করা যায় সে বিষয়েও কর্মশালায় আলোচনা করা হবে। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশের মাধ্যমে অনন্যসর জাতি ও অন্যান্য পশ্চাদপদ জাতিভুক্ত জনগণকে রোজগারের সুযোগ সৃষ্টি বৃদ্ধির লক্ষ্যে কি কি পরিকল্পনা নেওয়া প্রয়োজন সে বিষয়েও কর্মশালায় আলোচনা করা হবে।
অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রকের সচিব অঞ্জলি ভাবরা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তপশিলি জাতি কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী ভগবান দাস, অন্যান্য পশ্চাদপদ কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী রামপ্রসাদ পাল, সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের মন্ত্রী সান্ত্বনা চাকমা, বিহারের তপশিলি জাতি কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী সন্তোষ কুমার সুমন এবং রাজা সরকারের মুখ্য সচিব জে কে সিনহা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন