আগরতলা, ০৩ জুন : স্মার্ট সিটি আগরতলায় চাঞ্চল্যকর বোধিসত্ত্ব দাস হত্যা মামলার রায় ঘোষণা হয় শনিবার। চারজন দোষীদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড সঙ্গে পঞ্চাশ হাজার টাকা করে প্রত্যেককে জরিমানা করলো আদালত। অনাদায় তিন মাসের অতিরিক্ত জেল খাটতে হবে আসামিদের। এদিন সিনিয়র আইনজীবী ও সরকার পক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর সম্রাট কর ভৌমিক জানান সুপ্রিম কোর্টের রায়ে স্পষ্ট বলা হয়েছে, কারুর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড মানেই তাকে আজীবন জেলে বন্দি থাকতে হবে। এই কারণেই সরকার পক্ষ থেকে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ফাঁসির আবেদন করা হয়নি।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৩রা আগস্ট রাজধানী আগরতলার জ্যাকসান গেইট এলাকায় পেশায় ইউকো ব্যাংকের ধর্মনগর ব্রাঞ্চের ম্যানেজার বোধিসত্ত্ব দাসের উপর নৃশংস আক্রমণ চালানো হয়। এই খুনের দায়ে অভিযুক্ত চারজনকে আটক করেছিল পুলিশ। দীর্ঘ চার বছর বিচারের জন্য আইনের দ্বারে ঘুরছিলেন বোধিসত্বের অসহায় মা রঞ্জনা দাস। অবশেষে ২রা জুন বোধিসত্ত্ব দাসকে খুনের ঘটনায় চার অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করলো জেলা আদালত। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় মানে খুনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত এবং ৩৪ ধারা অর্থাৎ সঙ্ঘবদ্ধভাবে খুনের প্রবৃত্তি প্রমাণিত হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এই মামলায় মোট ৫৬ জন সাক্ষী দিয়েছে। শনিবার বিচারপতি তাদের শাস্তি ঘোষণা করবেন।
চাঞ্চল্যকর এই খুনের ঘটনায় যাবজ্জীবন শাস্তি পাওয়া চার অভিযুক্ত হলো শহরের প্রতিষ্ঠিত স্বর্ণ ব্যবসায়ীর ছেলে সুমিত চৌধুরী ওরফে বাবাই, ঠিকেদার সুমিত বণিক ওরফে বাপি, ট্রাফিক পুলিশের প্রাক্তন ইন্সপেক্টর সুকান্ত বিশ্বাস এবং শোয়েব মিয়া ওরফে ওমর শরীফ। এরা চারজনই শহরের নামিদামি ও প্রভাবশালী ঘরের ছেলে। প্রতিপত্তির প্রভাবে ধামাচাপা দিতে চেয়েছিল ঘটনাটিকে। অন্যদিকে এই কোটিপতি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধেই ছেলের মৃত্যুর বিচার চেয়ে মামলা দায়ের করেছিল পুত্র শোকাতুর মা রঞ্জনা দাস।
২০১৯ সালের ৩ ও ৪ আগস্ট রাতের মাঝামাঝি সময়ে এই চার ব্যক্তি রাতের শহরের জ্যাকসান গেইট এলাকায় ব্যাংক ম্যানেজার বোধিসত্ত্বের উপর হামলা চালায়। প্রথমে হাতাহাতি তারপর বুট জুতো, বিয়ারের বোতল এবং ছুরি দিয়ে আঘাত। নৃশংসভাবে বোধিসত্ত্বকে হত্যার উদ্দেশ্যে একাধিকবার আঘাত করে তারা। কয়েকদিনের মধ্যেই কলকাতায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বোধিসত্ত্ব। এদিকে বোধিসত্ত্বের পরিবারের অভিযোগ কোটিপতি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদালতের সওয়াল শুরুর আগে থেকেই লক্ষ লক্ষ টাকা উড়তে থাকে। তাদের পক্ষে মামলায় লড়াই করা দুই আইনজীবী মৃণাল কান্তি বিশ্বাস এবং কৃষ্ণেন্দু বিকাশ দে'র বিরুদ্ধে থানায় মামলাও হয়।
চাঞ্চল্যকর এই মামলার তদন্ত করতে আদালতে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় চার্জশিট জমা করেন তদন্তকারী অফিসার। এই খুনের ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন বোধিসত্বর ছোটবেলার বন্ধু কিশোর কুমার পাল এবং ব্যবসায়ী বাসু কর। তাদেরকেও প্রভাবিত করতে চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ । এমনকি ঘটনার দিন জিবিপি হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার সেন্টারের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকও তার বয়ান থেকে পাল্টি খায়। এই ঘটনার অভিযুক্ত চারজনের সাজা ঘোষণার পর চিকিৎসক এবং বাসু করের বিরুদ্ধেও মামলা নেওয়া হবে বলে জানান আইনজীবী সম্রাট কর ভৌমিক। তবে কিশোর কুমার পাল সাক্ষ্য বদলাননি। মোট ৫৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যপ্রমাণ শোনার পর অবশেষে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী শুক্রবার এই মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা হয়। জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারপতি আদালতে চার অভিযুক্তের উপস্থিতিতেই ঘোষণা করেন মামলার চূড়ান্ত রায়। এতে অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং শনিবার দোষীদের শাস্তি ঘোষণা করবেন বিচারপতি।
এদিকে অভিযুক্তদের পক্ষে আইনজীবী পীযুষ কান্তি বিশ্বাস শুক্রবার তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন এ এক অন্যায় বিচার। জীবনের ৪৫ বছরের অভিজ্ঞতায় যা তিনি দেখেননি। তিনি আরো বলেন এই ঘটনায় উপস্থিত সাক্ষীরা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে একটিবারের জন্যও বলেনি যে অভিযুক্তরা খুনের সাথে যুক্ত। এই প্রমাণের উপর ভিত্তি করে দোষী সাব্যস্ত করা যায় না বলে অভিযোগ করেন। তিনি। এদিন তিনি জানান জেলা ও দায়রা আদালতের এ রায় কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হবে অভিযুক্তরা।
TBSE : ৫ জুন ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদের উচ্চমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন