কোলকাতা, ০৩ জুন : ওড়িশার বালেশ্বরের কাছে বাহানগা বাজার স্টেশনে গতসন্ধ্যার ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ২৬১ ছাড়িয়েছে। আহতের সংখ্যা ৯০০-র বেশী। ওড়িশার মুখ্যসচিব প্রদীপ জেনা জানিয়েছেন, ত্রাণ ও উদ্ধার কাজ জোরকদমে চলেছে। মৃতের সংখ্যা আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী NDRF এবং ওড়িশা বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী-ODRF, ত্রাণ ও উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
রেল সুত্রে জানা গেছে, চেন্নাইগামী করমন্ডল এক্সপ্রেস গতকাল সন্ধ্যা ৬’টা ৫১ মিনিট নাগাদ একই লাইনে চলে আসা একটি মালগাড়িতে গিয়ে প্রথমে ধাক্কা মারে। দুর্ঘটনার জেরে সেটি ইঞ্জিনের পর থেকে স্লিপার ক্লাস, প্যানেন্ট্রি কার সহ একাধিক কামরা লাইনচ্যুত হয়। বেলাইন হওয়া কামরাগুলি পাশের লাইনে গিয়ে পরে। সেইসময় ওই লাইনে হাওড়ামুখী যশবন্তপুর এক্সপ্রেসে ধাক্কা লেগে সেটির’ও কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হয়।
বালেশ্বরে ট্রেন দুর্ঘটনায় আহতদের নিরাপদে উদ্ধার করে চিকিৎসার বন্দোবস্ত করার জন্য সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। পূর্বাঞ্চলীয় কম্যান্ডের সামরিক ও চিকিৎসকদল অ্যাম্বুলেন্সে সহায়ক সরঞ্জাম নিয়ে দুর্ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন। ভারতীয় বায়ুসেনার পক্ষ থেকে হতাহতদের উদ্ধার করার জন্য এম আই ১৭ হেলিকপ্টার পাঠানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বালেশ্বরে পৌঁছে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। প্রধানমন্ত্রী আহতদের দেখতে কটকের এসসিবি হাসপাতালে যান। সেখানে তাঁদের সঙ্গে কথাও বলেন তিনি। পরে সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, দুর্ঘটনার সব রকম তদন্ত করা হবে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওড়িশার ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের জন্য শোক ও সমবেদনা জানিয়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বার্তা পাঠিয়েছেন। তাইওয়ানের রাষ্ট্রপতি সাই ইং উইন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল,অস্ট্রেলিয়া বিদেশ দপ্তর, ভারতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটটি প্রমুখ তাঁদের শোক বার্তা পাঠিয়েছেন।তাঁরা সকলেই ওড়িশায় এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার সময় ভারতের পাশে থাকার কথা বলেছেন।
ওড়িশার মুখ্যসচিব প্রদীপ জেনা জানিয়েছেন, সাতটি NDRF, পাঁচটি ODRF, ২৪টি ফায়ার সার্ভিস ইউনিট এবং স্থানীয় পুলিশ এবং স্বেচ্ছাসেবকরা বর্তমানে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে।কেন্দ্র, এইম্স ভুবনেশ্বর ও কটক থেকে দুটি চিকিৎসক দল দুর্ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মান্ডবিয়া বলেছেন, দুর্ঘটনার কবলে পড়া যাত্রীদের প্রাণ বাঁচাতে সরকার যাবতীয় চিকিতসা ও অন্যান্য সহায়তা দিচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ওড়িশার রেল দুর্ঘটনাকে শতাব্দীর সবচেয়ে বড় রেল দুর্ঘটনা বলে অভিহিত করেছেন । শনিবার বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ তিনি হেলিক্পটারে বালেশ্বরের দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছন। দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রথমে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, ট্রেন দুর্ঘটনায় বাংলার বহু মানুষ হতাহত হয়েছে। যে কামরাগুলি এখনও সরানো যায়নি, সেগুলি সরালে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন । মুখ্যমন্ত্রী জানান, সামান্য আহতরা অনেকেই বাংলায় ফিরে গিয়েছেন। বালেশ্বরের হাসপাতালে জায়গা না হলে, আহতদের কলকাতায় এনে চিকিৎসার ব্যবস্থাকরা হবে। পাশাপাশি মমতা ব্যানার্জি ওই দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে রেলমন্ত্রীর কাছে যথাযথ তদন্তের দাবি জানান।
দক্ষিন-পুর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক আদিত্য কুমার চৌধুরী জানিয়েছেন,দুর্ঘটনাস্থলে ইতোমধ্যে ৫০০ শ্রমিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার কাজ করছে। দ্রুত রেললাইন মেরামতির কাজ করতে সেখানে আরও শ্রমিক পৌঁছাবে বলে তিনি জানান।
বালেশ্বরে গতকালের ট্রেন দুর্ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণ আজ সকালে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর এ’কথা জানিয়ে বলেন,রেল সুরক্ষা কমিশনার এ. এম চৌধুরী পৃথক একটি তদন্ত করবেন।ত্রাণ ও উদ্ধারের কাজ খতিয়ে দেখার পর সাংবাদিকদের তিনি বলেন,সরকার এই কাজে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। জেলা প্রশাসনের থেকে অনুমতি পাওয়া গেলেই পুনরুদ্ধারের কাজ শুরু হবে। তিনি বলেন, বালেশ্বরের দুর্ঘটনায় ত্রাণ ও উদ্ধার কাজের জন্য সরকার সবরকমভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী NDRF এবং বায়ুসেনার দলকেও কাজে লাগানো হচ্ছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন