আগরতলা, ১৮ জুন : রাজ্যে শিক্ষার্থীদের গুণগত শিক্ষা প্রদান করার পাশাপাশি ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থার উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে রাজ্য সরকার। এক্ষেত্রে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার (এআই)- ব্যবস্থার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে রাজ্যেই উচ্চ শিক্ষার বিভিন্ন সুযোগ গ্রহণের জন্য নানাধরনের কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ প্রয়োজনীয় শিক্ষা পরিকাঠামো গড়ে উঠেছে। বুধবার হাঁপানিয়া আন্তর্জাতিক মেলা প্রাঙ্গনের অডিটোরিয়ামে ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ (টিবিএসই) এবং কেন্দ্রীয় মধ্যশিক্ষা পর্ষদ পরিচালিত বিদ্যাজ্যোতি স্কুলের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় শীর্ষ স্থানাধীকারীদের সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডা: মানিক সাহা একথা বলেন। বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তর আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে মোট ৮২জন শিক্ষাথীর্কে সম্মাননা জানানো হয়।
মুখ্যমন্ত্রী সন্মাননা প্রাপক সকল ছাত্রছাত্রীদের শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, এই পরীক্ষায় যাদের আশানুরূপ ফলাফল হয়নি তাদের একে ব্যর্থতা হিসেবে না দেখে কঠোর পরিশ্রম ও চেষ্টার মাধ্যমে আগামীদিনে সেই ব্যর্থতাকে জয় করে জীবনে এগিয়ে যেতে হবে। কারণ ব্যর্থতার মধ্যেই লুকিয়ে আছে সাফল্যের চাবিকাঠি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। জ্ঞান ও মেধায় তারা কোন অংশেই কম নয়। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পাশাপাশি নিজের জীবনশৈলী গঠনের উপরও নজর দিতে হবে। খেলাধুলা ও সামাজিক গঠনমূলক কাজেও নিজেদের নিয়োজিত করা প্রয়োজন। শুধুমাত্র পুঁথিগত শিক্ষাই জীবনের মূল ভিত্তি হতে পারেনা। আত্মকেন্দ্রিকতার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে দেশ ও সমাজের কল্যাণে নিজেকে আত্মনিয়োগ করার উপরও গুরুত্বারোপ করতে হবে। নেশার আশক্তি থেকে ছাত্রছাত্রীদের দূরে রাখার ক্ষেত্রে সবার দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকার কথাও তিনি উল্লেখ করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শিক্ষার কোন শেষ নেই। যে যতবেশি পড়াশুনা করবে সে তত বেশি জ্ঞান লাভ করবে। সেইসাথে তার মধ্যে আত্মবিশ্বাসও তৈরি হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী অভিমত ব্যক্ত করেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০২৫ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষায় মোট পাশের হার ৮৬.৫৩ শতাংশ। ৩৪৫টি স্কুলে ১০০ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাশ করেছে। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় মোট পাশের হার ৭৯.২৯ শতাংশ। ৩৯টি স্কুলে ১০০ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাশ করেছে। বিদ্যাজ্যোতি স্কুলের মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশের হার ৮৬ শতাংশ, যা গতবছরের তুলনায় ২৬ শতাংশ বেশি। ১০০ শতাংশ সাফল্য এসেছে এমন বিদ্যাজ্যোতি স্কুলের সংখ্যা হচ্ছে ১৫টি, যা গতবছর ছিল ১টি বিদ্যালয়। বিদ্যাজ্যোতি স্কুলের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশের হার ৭১ শতাংশ, যা গতবছরের তুলনায় ২১ শতাংশ বেশি। ১০০ শতাংশ সফল বিদ্যাজ্যোতি স্কুলের সংখ্যা হচ্ছে ৫টি। যা গতবছর শূন্যের কোটায় ছিল।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে গুণগত শিক্ষার প্রসারে এনসিইআরটি পাঠ্যক্রম চালু, ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ে রূপান্তর, সুপার-৩০ প্রকল্প চালু, মুখ্যমন্ত্রী মেধা পুরস্কার, ট্যালেন্ট সার্চ এক্সামিনেশন, বিদ্যাজ্যোতি প্রকল্প চালু, প্রয়াস প্রকল্পে বিনামূল্যে ওয়ার্কবুক বিতরণ, নবম শ্রেণির ছাত্রীদের বিনামূল্যে বাইসাইকেল বিতরণ, টিবিএসই পরীক্ষার আমূল সংস্কার, স্মার্ট ক্লাস, আইসিটি ল্যাব এবং টিংকারিং ল্যাব চালু, মিশন মকুল ইত্যাদি বিভিন্ন পদক্ষেপ মকুল গ্রহন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দেশে নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি-২০২০ চালু করা হয়েছে। আমাদের রাজ্যেও স্কুল ও কলেজে জাতীয় শিক্ষানীতি কার্যকর করা হয়েছে। পরীক্ষা নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের চাপ কমানোর লক্ষ্যে 'পরীক্ষা পে চর্চা' কর্মসূচি শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে ২০২৪-২৫ সালে মোট ৪৪টি বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ সহ ৩৪৬টি বিদ্যালয়ে বিভিন্ন পরিকাঠামোর সংস্কার করা হয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে ৩০টি বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণ সহ ১২৩টি বিদ্যালয়ের পরিকাঠামোগত উন্নয়নের ও সংস্কার সাধনের পরিকল্পনা রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, উচ্চ শিক্ষায় উৎসাহিত করার লক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রী কন্যা আত্মনির্ভর যোজনায় দ্বাদশমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১৪০ জন মেধাবী ছাত্রীকে বিনামূল্যে স্কুটি দেওয়া হয়েছে। সরকারি ডিগ্রী কলেজগুলিতে ছাত্রীদের ভর্তি ফি সহ বিভিন্ন ফি মকুব করায় রাজ্যে উচ্চ শিক্ষায় মেয়েদের গ্রস এনরোলমেন্ট রেশিও বেড়েছে। দিব্যাঙ্গ (দৃষ্টিহীন) শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য চিফ মিনিস্টার স্পেশাল স্কলারশিপ চালু করা হয়েছে। লক্ষ্য প্রকল্পে এখন পর্যন্ত ১০ জনকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আগরতলায় আইআইআইটি, ন্যাশনাল ফরেন্সিক সায়েন্স ইউনিভার্সিটি চালু সহ টিআই-তে ড্রোন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। এমবিবি বিশ্ব বিদ্যালয়কে সার্বিকভাবে গুনমান সম্পন্ন একটি উন্নত বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকারের সুদুর প্রসারীর পরিকল্পনা সহ রাজ্যে বিদ্যামান সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির কথাও মুখ্যমন্ত্রী তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিক্ষা দপ্তরের বিশেষ সচিব রাভেল হেমেন্দ্র কুমার। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা এন সি শর্মা। অনুষ্ঠানে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানাধীকারীদের ট্যাবলেট এবং শংসাপত্র দিয়ে সম্মানিত করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী কৃতিদের হাতে সম্মাননা তুলে দেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন