আগরতলা, ১৫ আগস্ট : রাজ্য সরকার সামগ্রিকভাবে সকল অংশের মানুষের উন্নয়নে বহুমুখী কর্মধারা অব্যাহত রেখেছে জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়িত করতে রাজ্য সরকার দায়বদ্ধতার সাথে সর্বাত্মক প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। গত ৫ বছরে রাজ্যে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সবকা সাথ, সবকা বিকাশের মন্ত্রকে পাথেয় করে রাজ্য সরকার সামগ্রিকভাবে সকল অংশের মানুষের উন্নয়নে বহুমুখী কর্মধারা অব্যাহত রেখেছে। আজ সকালে আসাম রাইফেলস ময়দানে ৭৭তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যবাসীর উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে জনকল্যাণে রাজ্য সরকারের গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচি তুলে ধরে বলেন, ইতিমধ্যেই ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জনকল্যাণমুখী বাজেটে ১৩টি নতুন প্রকল্প চালুর ঘোষণা করা হয়েছে। জনজাতি, সংখ্যালঘু, তপশিলী জাতিগোষ্ঠী সহ সকল অংশের মানুষের উন্নয়নের রূপরেখার একটি সঠিক পথ নির্দেশিকা এই বাজেটে রয়েছে।
জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে মুখ্যমন্ত্রী সম্মিলিত বাহিনীর কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। কুচকাওয়াজে সিকিউরিটি ও নন সিকিউরিটি বিভাগে ১৬টি প্ল্যাটুন অংশগ্রহণ করে। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে রাজ্য পুলিশ বাহিনীর যে সমস্ত আধিকারিক ও কর্মীগণ কর্মক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য পদক পেয়েছেন তাঁদের পদক পরিয়ে দেন।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তর, ত্রিপুরা উপজাতি এলাকা স্বশাসিত জেলা পরিষদ এবং যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া দপ্তরের পরিচালনায় একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। এতে বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রছাত্রীর অংশগ্রহণ করে। অনুষ্ঠানে মুখ্যসচিব কে কে সিনহা, রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন এবং রাজ্য প্রশাসন ও আরক্ষা প্রশাসনের পদস্থ আধিকারিকগণ উপস্থিত ছিলেন।
এদিন আসাম রাইফেলস ময়দানে ৭৭তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের মূল অনুষ্ঠানে সিকিউরিটি ক্যাটাগরির যে ১১টি প্ল্যাটুন কুচকাওয়াজে অংশ নেয় সেগুলি হচ্ছে বিএসএফ, আসাম রাইফেলস, সিআরপিএফ, মেঘালয় পুলিশ, টিএসআর প্রথম ব্যাটেলিয়ন, টিএসআর দ্বিতীয় ব্যাটেলিয়ন, টিএসআর রিক্রুট পুরুষ, টিএসআর রিক্রুট মহিলা, পশ্চিম জেলা পুরুষ, ফরেস্ট প্ল্যাটুন এবং হোমগার্ড পুরুষ প্লাটুন। নন সিকিউরিটি ক্যাটাগরিতে যে ৫টি প্ল্যাটুন কুচকাওয়াজে অংশ নেয় সেগুলি হচ্ছে এনসিসি, স্কাউটস অ্যান্ড গাইডস, এনএসএস, সিভিল ডিফেন্স ও আসাম রাইফেলস পাবলিক স্কুল। এছাড়া ৪টি ব্যান্ড প্ল্যাটুন আজ কুচকাওয়াজে অংশ নেয়। এগুলি হচ্ছে বিএসএফ, কেটিডিএস পিটিএ, টিএসআর প্রথম ব্যাটেলিয়ন এবং টিএসআর দ্বিতীয় ব্যাটেলিয়ন ব্যান্ড।
সিকিউরিটি বিভাগে উৎকর্ষতার নিরিখে কুচকাওয়াজে অংশ নেওয়া দলগুলির মধ্যে প্রথম হয়েছে টিএসআর রিফ্রুটস মহিলা, দ্বিতীয় হয়েছে টিএসআর রিক্রটস পুরুষ দল এবং তৃতীয় হয়েছে আসাম রাইফেলস প্ল্যাটুন। নন সিকিউরিটি বিভাগে প্রথম হয়েছে আসাম রাইফেলস পাবলিক স্কুল, দ্বিতীয় হয়েছে এনএসএস প্ল্যাটুন এবং তৃতীয় হয়েছে এনসিসি প্ল্যাটুন।
২০২৩ সালের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রাজ্যের ৬ জন পুলিশ অফিসার ও কর্মীর নাম এদিন ভারতের রাষ্ট্রপতির অনুমোদনে বিভিন্ন পদকে ভূষিত হবার ঘোষণা দেওয়া হয় । পুলিশ মেডেল ফর মেরিটোরিয়াস সার্ভিস পদক যারা পেয়েছেন তাঁরা হলেন ডিআইজিপি কৃষ্ণেন্দু চক্রবর্তী, নায়েব সুবেদার রাজু দাস, হাবিলদার পবন দেবনাথ, হেড কনস্টেবল বাবুল ঘোষ, অ্যাসিস্টেন্ট কমান্ডেন্ট সুদর্শন দাস ও নায়েব সুবেদার পিন্টু দাস। তাছাড়াও হোমগার্ডস ও সিভিল ডিফেন্স মেডেল ফর মেরিটোরিয়স সার্ভিসের পদক পেয়েছেন হোমগার্ড পন্ডিত সরকার । পদক প্রাপকদের ২০২৪ সালের প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে পদক তুলে দেওয়া হবে। তবে আসাম রাইফেলস ময়দানে ৭৭তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা ২০২২ সালের প্রজাতন্ত্র দিবসের পুলিশ মেডেল ফর মেরিটোরিয়াস সার্ভিস প্রাপ্ত টিএসআর নবম ব্যাটেলিয়নের হাবিলদার (জিডি) সমর মুড়াসিং, ২০২১ সালের স্বাধীনতা দিবসের হোমগার্ড অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স মেডেল ফর মেরিটোরিয়াস সার্ভিসের জন্য হোমগার্ড ইন্দ্রজয় ত্রিপুরা, ২০২০-২১ সালের ইউনিয়ন হোম মিনিস্টার্স মেডেল ফর এক্সিলেন্স ইন পুলিশ ট্রেনিংয়ের জন্য সিটিআই-র অ্যাসিস্টেন্ট কমান্ডেন্ট বিপ্লব কুমার দেব, সিআইএটি স্কুলের সাব (জিডি) বিমল দেবনাথ, কেটিডিএস পিটিএ-র এসআই (এবি) বিদেশ্বরী দাস, কেটিডিএস পিটিএ-র হেড কনস্টেবল অমল শীলকে পদক পরিয়ে দেন।
তাছাড়াও ২০২১ সালে কর্মক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে অসাধারণ আসুচনা কুশলতা পদক পেয়েছেন আইপিএস এসপি (এসবি) বর্তমানে এআইজিপি (হেড কোয়ার্টার) ত্রিপুরা পদে কর্মরত শংকর দেবনাথ। আজ মুখ্যমন্ত্রী এআইজিপি শংকর দেবনাথের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। একই সঙ্গে অনুষ্ঠানে কর্মক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বন দপ্তরের ৩ জন আধিকারিককে বিশেষ পুরস্কার প্রদান করেছেন মুখ্যমন্ত্রী । এরমধ্যে ফরেস্টার অব দি ইয়ার পুরস্কার পেয়েছেন এফপিইউ সদরের ফরেস্টার প্রিয়লাল সেন। বনরত্ন পুরস্কার পেয়েছেন রাজনগর ডব্লিউআই-র ফরেস্ট রেঞ্জার সুকান্ত সরকার এবং কিল্লা বিটের ফরেস্টার জয়লাল জমাতিয়া পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ অংশীদারী বনায়ন পরিচালক পুরস্কার।
এদিনের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ২০২১-২২-এর সেরা ফরেস্ট রেঞ্জ, দ্বিতীয় সেরা ফরেস্ট রেঞ্জ এবং তৃতীয় সেরা ফরেস্ট রেঞ্জকে পুরষ্কৃত করেছেন। সেরা ফরেস্ট রেঞ্জের পুরস্কার পেয়েছে গোমতী জেলার করবুক ফরেস্ট রেঞ্জ। পুরস্কার গ্রহণ করেছেন ফরেস্টার জন্টু মজুমদার। দ্বিতীয় সেরা ফরেস্ট রেঞ্জের পুরস্কার পেয়েছে ধলাই জেলার আমবাসা ফরেস্ট রেঞ্জ। পুরস্কার গ্রহণ করেন রেঞ্জ অফিসার অনন্ত মালাকার। তৃতীয় সেরা ফরেস্ট রেঞ্জের পুরস্কার পেয়েছে উত্তর জেলার দামছড়া ফরেস্ট রেঞ্জ। পুরস্কার গ্রহণ করেন রেঞ্জ অফিসার প্রবীর দাস।
২০২৩ সালে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত প্রজাতন্ত্র দিবসের ক্যাম্প এবং প্রধানমন্ত্রীর র্যালিতে ত্রিপুরার ৮ জন এনসিসি ক্যাডেট অংশগ্রহণ করে বিশেষ কুশলতা ও কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। তাদের হাতে আজ অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী পদক ও শংসাপত্র তুলে দেন। এরমধ্যে ২০২২ সালে নয়াদিল্লির সৈনিক ক্যাম্পের জন্য সিনিয়র আন্ডার অফিসার প্রজ্যোতি দাস, আন্ডার অফিসার পিয়ালী দেব, সাজেস্ট পূর্বা সিনহা এবং ক্যাডেট দেবা সিনহার হাতে পদক তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়া চলতি বছর নয়াদিল্লির প্রজাতন্ত্র দিবসের ক্যাম্পের জন্য আন্ডার অফিসার সৌরভ দাস, কর্পোরাল বিপাস সিনহা, আন্ডার অফিসার শুভ্রনীল চক্রবর্তী এবং ক্যাডেট রাহেল কলইকে মুখ্যমন্ত্রী পুরস্কার প্রদান করেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন