আগরতলা, ২০ সেপ্টেম্বর : মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা তাঁর ব্যস্ততম সময়ের মধ্যেও জনগণের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে ‘মুখ্যমন্ত্রী সমীপেষু' কর্মসূচিতে সমস্যা পিড়িত মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন। মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে অন্যান্য দিনের মতো বুধবারও মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা জনগণের নানাবিধ সমস্যা, অভাব ও অভিযোগ শুনেন। এদের মধ্যে সিংহভাগই এসেছেন চিকিৎসার সহায়তার আর্জি নিয়ে। মুখ্যমন্ত্রী তাদের চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র খতিয়ে দেখে সাথে সাথেই সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী সমীপেষু কর্মসূচিতে বিশালগড়ের অনিতা দাস তাঁর নাতনির চিকিৎসা সংক্রান্ত আর্জি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। তাঁর ১৭ বছর বয়সী নাতনি ছোটবেলা থেকেই থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত। সম্প্রতি তাঁর নাতনির বর্ধিত প্লীহা (স্প্রেনোমেগালি) রোগ ধরা পড়ে। অনিতা দাসের নাতনির বাবা মারা গেছেন এবং মা গৃহ পরিচারিকার কাজ করেন। এই অবস্থায় তিনি নাতনির চিকিৎসার খরচ মেটাতে হিমসিম খাচ্ছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি আজ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এসেছিলেন প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আর্জি নিয়ে। মুখ্যমন্ত্রী অনিতা দাসের নাতনির চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখে সঙ্গে সঙ্গে জিবি হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপার ডাঃ শঙ্কর চক্রবর্তীকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
অরুন্ধতীনগরের সঞ্জয় দাস তাঁর স্ত্রীর চিকিৎসা সংক্রান্ত সাহায্যের আর্জি নিয়ে আজ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। পেশায় মোবাইল দোকানের কর্মচারি সঞ্জয় দাসের স্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে অ্যাপেনডিক্স রোগে ভুগছেন। চিকিৎসক তাঁর স্ত্রীকে অপারেশন করানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু আর্থিক অস্বচ্ছলতার জন্য তিনি তার স্ত্রীর অপারেশন করাতে পারছেন না। এই অবস্থায় তিনি আর্থিক সহায়তার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানান। এক্ষেত্রেও মুখ্যমন্ত্রী সঞ্জয় দাসের স্ত্রীর চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখে চিকিৎসায় সহযোগিতা করার জন্য জিবি হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপার ডাঃ শঙ্কর চক্রবর্তীকে নির্দেশ দেন।
সিপাহীজলা জেলার বক্সনগরের ফিরোজ মিঞা তাঁর চিকিৎসা সংক্রান্ত আর্জি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। বিপিএল ভুক্ত পরিবারের ফিরোজ মিঞা দীর্ঘদিন যাবৎ কোয়াড্রিপারেসিস সহ সার্ভিকাল মেরুদন্ডের আঘাতে ভুগছেন। আর্থিক অস্বচ্ছলতার দরুণ সে তাঁর সঠিক চিকিৎসা করাতে পারছেন না। এই অবস্থায় তিনি আর্থিক সহায়তার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানান। মুখ্যমন্ত্রী ফিরোজ মিঞার চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজ দেখে সঙ্গে সঙ্গে জিবি হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপার ডাঃ শঙ্কর চক্রবর্তীকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের নির্দেশ দেন।
আগরতলার বড়দোয়ালীর মনিকা দত্ত তাঁর স্বামীর চিকিৎসা সংক্রান্ত আর্জি নিয়ে আজ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। ব্রেন স্ট্রোকে তাঁর স্বামীর শরীরের বাম অংশ সম্পূর্ণ প্যারালাইজড হয়ে পড়ে। ইতিমধ্যেই তাঁর মাথায় তিনটি অপারেশন হয়েছে। স্বামীর চিকিৎসার খরচ মেটাতে গিয়ে মনিকা দত্ত তাঁর সমস্ত জমানো টাকা বায় করে ফেলেছেন। বর্তমানে স্বামীর চিকিৎসার খরচ চালাতে তিনি খুব অসুবিধার মধ্যে পড়েছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি আজ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তার আর্জি জানান। মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা এক্ষেত্রেও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।
তাছাড়াও এবারের মুখ্যমন্ত্রী সমীপেষু কর্মসূচিতে আসা বক্সনগরের সবুজ মিঞা, কৈলাসহরের লিটন দাস, রাণীরবাজারের রজত সিংহ, ধর্মনগরের অর্চনা রায়ের মতো অনেকেই পেয়েছেন চিকিৎসায় সহায়তার আশ্বাস। চিকিৎসা সংক্রান্ত সমস্যার সুরাহা করে দেওয়ার পাশাপাশি এদিন মুখ্যমন্ত্রী জমি সহ আইনি সংক্রান্ত বিষয় নিষ্পত্তিরও ব্যবস্থা করে দেন।
আজ মুখ্যমন্ত্রী সমীপেষু কর্মসূচিতে মুখ্যমন্ত্রীর সচিব ড. প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী, স্বাস্থ্য সচিব ড. দেবাশিষ বসু, সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের সচিব তাপস রায়, জিবি হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপার ডাঃ শঙ্কর চক্রবর্তী এবং ক্যান্সার হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপার ডাঃ এস দেববর্মা উপস্থিত ছিলেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন