আগরতলা, ১২ ডিসেম্বর : রাজ্যের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে প্রাণীসম্পদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি ডিম, দুধের মতো প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রীতে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তুলতে গবাদি পশুপাখি পালন ও পরিচর্যা খুবই প্রয়োজন। আজ আগরতলার প্রজ্ঞাভবনে এ-হেল্প (অ্যাক্রিডিটেড এজেন্ট ফর হেলথ অ্যান্ড এক্সটেনশন অব লাইভস্টক প্রোডাকশন) কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক সূচনা করে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা একথা বলেন। প্রাণীসম্পদ বিকাশ দপ্তরের উদ্যোগে এবং ত্রিপুরা গ্রামীণ জীবিকা মিশনের সহযোগিতায় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রাণী পরিষেবার সাথে যুক্ত স্বসহায়ক গোষ্ঠীর প্রায় ৩০০ জন পশুসখী অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা বলেন, এই কর্মসূচিতে স্বসহায়ক গোষ্ঠীর সদস্য যারা পশুসখী হিসেবে নিয়োজিত তারা প্রাণী স্বাস্থ্যের প্রাথমিক পরিষেবা প্রদানে এ-হেল্প-এর স্বীকৃত প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করবে। প্রত্যন্ত এলাকায় যেখানে পশু স্বাস্থ্যকর্মীদের পৌছুতে অসুবিধার সম্মুখীন হয় সেখানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পশুসখীরা প্রাণীসম্পদ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই কর্মসূচিতে পশুসখীরা লাইভস্টক রিসোর্সপার্সন হিসেবে গ্রামের প্রাণীপালকদের প্রাণীপালন বিষয়ক তথ্য সরবরাহ করবে। পশুসখীগণ রাজ্যের প্রাণী চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান ব্যবস্থাকে আরও সুসংগঠিত করবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে রাজ্যে ১ হাজার ৭৭ জন সক্রিয় পশুসখী রয়েছে। এ-হেল্প কর্মসূচিতে নির্বাচিত পশুসখীদের বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার উপর তিনি গুরুত্ব-আরোপ করেন। ইতিমধ্যেই রাজ্যের ১০ জন আধিকারিক ন্যাশনাল ডেয়ারি ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্ট বোর্ড থেকে প্রশিক্ষকের প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন বলেও মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মার্গদর্শনে জনস্বার্থে গৃহীত বিভিন্ন অভিনব প্রকল্পগুলি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে। তিনি বলেন, রাজ্যের ভেটেরিনারি কলেজের উন্নতিতে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়াও রাজ্যে ১৬টি প্রাণী হাসপাতাল, ৬৪টি ডিসপেন্সারি এবং ৪৬৩টি উপ- স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দপ্তরের কর্মীরা প্রাণী চিকিৎসা প্রদানের পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প রূপায়ণে কাজ করছে। প্রাণীসম্পদ বিকাশ দপ্তরের উদ্যোগে এবং ত্রিপুরা গ্রামীণ জীবিকা মিশনের সহযোগিতায় রাজ্যে এ-হেল্প কর্মসূচিটি সফলভাবে বাস্তবায়িত হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী আশা ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে প্রাণীসম্পদ বিকাশ দপ্তরের মন্ত্রী সুধাংশু দাস বলেন, এ-হেল্প কর্মসূচিতে ৩০০ জন পশুসখীকে ১৬ দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রশিক্ষণ শেষে তাদের কিট দেওয়া হবে। এই কর্মসূচি রূপায়ণের মধ্য দিয়ে প্রাণী স্বাস্থ্য সুরক্ষার পাশাপাশি মহিলাদের কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে। এরফলে তারা আর্থিকভাবেও স্বাবলম্বী হবে। মহিলাদের স্বনির্ভর করার মাধ্যমে রাজ্যের অর্থনৈতিক বিকাশ ত্বরান্বিত করা সরকারের মুখ্য উদ্দেশ্য। রাজ্যে দুধ উৎপাদনে স্বয়ম্ভরতার জন্য প্রতিটি জেলায় একটি ডেয়ারি ডেভেলপমেন্ট সেন্টার খোলার পরিকল্পনার রয়েছে বলেও প্রাণীসম্পদ বিকাশমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রাণীসম্পদ বিকাশ দপ্তরের সচিব দীপা ডি নায়ার। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন ন্যাশনাল ডেয়ারি ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের ডেপুটি গ্রুপ হেড (কো- অপারেটিভ ট্রেনিং) অনিন্দিতা বৈদ্য। অনুষ্ঠানে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরা গ্রামীণ জীবিকা মিশনের মুখ্য কার্যনিবাহী আধিকারিক অজিত শুরুদাস, প্রাণীসম্পদ বিকাশ দপ্তরের অধিকর্তা ড. এন কে চঞ্চল। অনুষ্ঠানে এ-হেল্প কর্মসূচির উপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী, প্রাণীসম্পদ বিকাশ দপ্তরের মন্ত্রী সহ অতিথিগণ এ-হেল্প কর্মসূচিতে পশুসখী যারা প্রশিক্ষণ নেবেন তাদের হাতে কিট তুলে দেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন