নতুন দিল্লি, ১৪ মে : ‘নকশালমুক্ত ভারত’ এর লক্ষ্যে ঐতিহাসিক সাফল্য অর্জন করে, ছত্তিশগড়-তেলেঙ্গানা সীমান্তের কারেগুট্টালু পাহাড়ে (KGH) নকশালবিরোধী সর্ববৃহৎ অভিযানে নিরাপত্তা বাহিনী ৩১ জন নকশালকে হত্যা করেছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সহযোগিতা মন্ত্রী শ্রী অমিত শাহ এক্স-এ পোস্ট করে জানান, "লাল সন্ত্রাসে প্রভাবিত কারেগুট্টালু পাহাড় আজ গর্বের সঙ্গে তেরঙ্গা উড়িয়ে দিচ্ছে।" এই পাহাড় একসময় PLGA ব্যাটালিয়ন ১, DKSZC, TSC এবং CRC-এর মতো বড় নকশাল সংগঠনের ইউনিফাইড হেডকোয়ার্টার ছিল, যেখানে কৌশল, অস্ত্র তৈরি ও প্রশিক্ষণ হত। শ্রী শাহ বলেন, "নিরাপত্তা বাহিনী মাত্র ২১ দিনে এই বৃহত্তম নকশালবিরোধী অভিযান সফল করেছে এবং এটি আনন্দের বিষয় যে এই অভিযানে কোনো নিরাপত্তাকর্মী নিহত হননি।" তিনি CRPF, STF ও DRG-এর জওয়ানদের সাহসিকতার প্রশংসা করেন এবং বলেন যে, “সমগ্র দেশ তাদের নিয়ে গর্বিত।” প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ভারত ৩১ মার্চ ২০২৬-এর মধ্যে সম্পূর্ণ নকশালমুক্ত হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।
ছত্তিশগড়ের বিজাপুরে CRPF-এর ডিরেক্টর জেনারেল শ্রী জ্ঞানেন্দ্র প্রতাপ সিং, ছত্তিশগড় পুলিশের ডিপি শ্রী অরুণ দেব গৌতম ও ADG (অ্যান্টি-নকশাল অপারেশনস) এক যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ২১ দিনের এই অভিযানে ৩১ জন ইউনিফর্ম পরিহিত নকশালের মৃতদেহ ও ৩৫টি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। এর মধ্যে ১৬ জন মহিলা নকশালও ছিল। এখন পর্যন্ত ২৮ জনের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে, যাদের ওপর মোট ১.৭২ কোটি টাকার পুরস্কার ঘোষণা ছিল। এই অভিযান ২১ এপ্রিল ২০২৫ থেকে ১১ মে ২০২৫ পর্যন্ত চলে এবং ধারণা করা হচ্ছে, নিহতদের মধ্যে PLGA ব্যাটালিয়ন, CRC কোম্পানি ও তেলেঙ্গানা স্টেট কমিটির সদস্যরা রয়েছে।
সুকমা ও বিজাপুর সীমান্ত অঞ্চলে PLGA ব্যাটালিয়ন, CRC কোম্পানি এবং তেলেঙ্গানা স্টেট কমিটির মতো শীর্ষ সশস্ত্র সংগঠনের ঘাঁটি ছিল। কঠিন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা বাহিনী বহু নিরাপত্তা শিবির গড়ে তোলে, যার ফলে নকশালরা কারেগুট্টালু পাহাড়ে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। এই পাহাড় ৬০ কিমি লম্বা ও ৫ থেকে ২০ কিমি চওড়া এবং অত্যন্ত দুর্গম। গত আড়াই বছরে এখানে ৩০০-৩৫০ জন সশস্ত্র নকশাল ক্যাডার আশ্রয় নিয়েছিল।
বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার ইনপুটের ভিত্তিতে বিশেষ যৌথ দল গঠিত হয়, যারা তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নের কাজ করে। এই তথ্যের ভিত্তিতে অপারেশনের পরিকল্পনা করা হয়, যাতে বাহিনীর শক্তি নির্ধারণ, মোতায়েনের সময়সূচি এবং রিলিফ-এর ব্যবস্থা করা যায়।
এই অভিযানে নিরাপত্তা বাহিনী বিপুল পরিমাণ IED, BGL শেল এবং অন্যান্য বিস্ফোরক উদ্ধার করে। এখন পর্যন্ত ২১৪টি নকশাল ঘাঁটি ও বাংকার ধ্বংস করা হয়েছে, ৪৫০টি IED, ৮১৮টি BGL শেল, ৮৯৯ বান্ডিল কোডেক্স, ডেটোনেটর ও বিস্ফোরক উদ্ধার হয়েছে। এছাড়া প্রায় ১২,০০০ কেজি খাদ্যসামগ্রীও উদ্ধার হয়েছে।
অপারেশনের সময় ১৮ জন CoBRA, STF ও DRG সদস্য IED বিস্ফোরণে আহত হন। তবে তারা সবাই এখন স্থিতিশীল এবং সেরা চিকিৎসা পাচ্ছেন। দিনের তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রির ওপরে থাকলেও সেনাদের মনোবল অটুট ছিল। অপারেশনে চারটি নকশাল কারিগরি ইউনিট ধ্বংস করা হয়েছে, যেখানে BGL শেল, হোমমেড অস্ত্র ও IED তৈরি হত। বহু রেশন, ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীও উদ্ধার হয়েছে।
অপারেশনের সফলতার পেছনে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সংযুক্ত প্রচেষ্টা, এবং 'হোল-অফ-গভর্নমেন্ট' দৃষ্টিভঙ্গি কার্যকর ছিল। পরিকল্পনার মূল স্তম্ভ ছিল – নতুন নিরাপত্তা শিবির স্থাপন, নকশালপ্রবণ জেলাগুলিতে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং নকশালদের মূল কাঠামোকে ধ্বংস করা। ২০২৫-এর প্রথম চার মাসে ১৯৭ জন নকশালকে নিরাপত্তা বাহিনী নিরস্ত করেছে। (PIB)
Offer Distribution : ত্রিপুরা পুলিশে কনস্টেবল পদে অফার পেলেন ৩৩২ জন মহিলা সহ ৯৭৫ জন
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন