কমলপুর, ০৬ নভেম্বর : একই বাড়িতে একই পরিবারে খুন করা হয়েছে চারজনকে। এই রোমহর্সক ঘটনা কমলপুর মহকুমার দুরাই শিব বাড়ি পঞ্চায়েতের ২ নং ওয়ার্ডে। নৃশংস খুনিও একই পরিবারের নাবালক নবম শ্রেণীতে পড়ুয়া ছাত্র। ঘটনা শনিবার বিকাল থেকে রাতের মধ্যে হবে বলে অনুমান। কেন খুন? কিভাবে খুন ? এর পিছনে অন্য কোনও রহস্য আছে কিনা? এখনো কিছু জানা যায়নি। পুলিশ নাবালক খুনি সুপ্রিয় দেবনাথকে আটক করেছে।
ঘটনার বিবরনে জানা গেছে ধলাই জেলার কমলপুর থানার অন্তর্গত হালাহালি সংলগ্ন দুরাই শিববাড়ি কাইমাছড়ায় শনিবার ১৬ বছরের কিশোর সুপ্রিয় দেবনাথ অত্যন্ত নৃশংসভাবে তার মা সমিতা দেবনাথ (৩৫), ঠাকুরদা বাদল দেবনাথ (৭০), বোন সুপর্ণা দেবনাথ (১০), প্রতিবেশী রেখা দেবনাথ (৪৫) কে কোদাল দিয়ে কুপিয়ে খুন করেছে। কমলপুর থানার ওসি সমরেশ দাস জানিয়েছেন, হয়তো নেশার আসক্তির কারণেই প্রথমে মা-কে মাথায় আঘাত করে খুন করে সুপ্রিয়। এরপর দশ বছরের বোন সুপর্ণাকে খুন করে সে। ঘরে লাউড স্পিকারে গান বাজিয়ে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যায় সে। মা-বোনকে খুন করে তাদের দেহ বাড়ির সৌচালয় তৈরির জন্য খনন করা কুয়ার গর্তে ফেলে দেয় সে। বিষয়টি দেখতে পান তার ঠাকুরদা বাদল দেবনাথ। তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন 'তুই কি করছস'? এই কথা বলার পরই কোদাল দিয়ে ঠাকুরদাকেও খুন করে সুপ্রিয় এবং দেহ টেনে ফেলে দেয় ওই গর্তে। এরপরই সে যখন দেহগুলো মাটি চাপা দিচ্ছিল প্রতিবেশী বাড়ির গৃহবধূ রেখা দেবনাথ তাকে কি করছে জিজ্ঞেস করতেই তাকেও মাথায় আঘাত করে খুন করে সুপ্রিয়। মা, ঠাকুরদা, বোনের পর তার হাত থেকে রেহাই পায়নি পড়শিও। পরপর চারজনকে খুন করে দেহ গর্তে ফেলে দেয়।
নৃশংস এই ঘটনায় পুলিশ আততায়ী সুপ্রিয় দেবনাথকে গ্রেপ্তার করেছে। ওসি সমরেশ দাস জানিয়েছেন, নৃশংসতা এবং বর্বরতার সাথে প্রত্যেককে খুন করা হয়েছে। পুলিশ হালাহালি বাজার থেকে খুনী নাবালক সুপ্রিয়কে গ্রেপ্তার করেছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে খুনের কথা স্বীকার করেছে। এই ঘটনায় কমলপুর থানার পুলিশ মামলা নম্বর ৬২/২২ অনুযায়ী ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ এবং ২০১ ধারায় একটি মামলা রুজু করেছে।
ঘটনার খবর পেয়ে ধলাই জেলার এসপি রমেশ যাদব কমলপুর ছুটে যান। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি জানান ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক এবং হৃদয় বিদারক। ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, শনিবার সকালেই সুপ্রিয়'র বাবা হারাধন দেবনাথ কাজে চলে যান। তখন বাড়িতে ছিলেন মা, ঠাকুরদা ও বোন। সন্ধ্যায় হারাধনবাবু বাড়িতে ফিরেই দেখেন ঘরে রক্তের স্রোত। ডাকাডাকি করে কারও সাড়াশব্দ না পেয়ে খোঁজ শুরু করেন। কিছু ক্ষণের মধ্যেই বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে কুয়োর মধ্যে চার জনের দেহ দেখতে পান তিনি। চিৎকার করে প্রতিবেশীদের ডাকেন। তাঁরাই পুলিশে খবর দেন। এর পরই কুয়ো থেকে চার জনের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সুপ্রিয়’র বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ তুলেছেন তাঁর বাবা । প্রতিবেশীদের দাবি, সুপ্রিয় নিয়মিত নেশা করত। এ নিয়ে প্রায়ই পরিবারে অশান্তি হত। তার জেরেই কি খুন, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তবে প্রতিবেশীকে কেন খুন করল তা নিয়ে রহস্য বাড়ছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন