আগরতলা, ২৭ ডিসেম্বর : বড়দিনের পর নতুন বছরের জন্য রাজ্যের নিয়মিত অনিয়মিত কর্মচারীদের জন্য শান্তাক্লজের উপহার দিলো সরকার। এবার নজির বিহীন ভাবে রাজ্যের সরকারি কর্মচারী ও পেনশনারদের জন্য একলাফে ১২ শতাংশ মহার্ঘভাতা (ডিএ/ডিআর) ঘোষণা দেওয়া হলো। এতে রাজ্যের সরকারি কর্মচারী ও পেনশনার মিলিয়ে প্রায় ১ লক্ষ ৯৪ হাজার পরিবার উপকৃত হবে। মঙ্গলবার মহাকরণে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে উপ মুখ্যমন্ত্রী তথা অর্থমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মার উপস্থিতিতে এই ঘোষণা দেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। এই ঘোষণার ফলে এখন থেকে রাজ্য সরকারের কোষাগার থেকে প্রতি মাসে ১২০ কোটি এবং বছরে ১ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হবে।
আরো একটি ইতিহাস তৈরী করলো রাজ্যের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার। রাজ্যের রাজনৈতিক ইতিহাসে যে সাহস আজ পর্যন্ত কোন পার্টি দেখাতে পারে নি সরকারি কর্মচারীদের জন্য সেই দুঃসাহস দেখাতে কুন্ঠিত হলো না প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার। নিয়মিত কর্মচারী তো বটেই, অনিয়মিত কর্মচারীদের জন্যও খুশির ডালি নিয়ে হাজির হল রাজ্য সরকার। এমনিতে ২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভারতীয় জনতা পার্টির পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল যে রাজ্যে বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠা হলে সরকারি কর্মচারীদের সপ্তম বেতন কমিশনের অনুকরণে বেতন দেওয়া হবে। সেই আশ্বাস মোতাবেক জনতার রায়ে ক্ষমতায় আসার পর আর্থিক সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকেও সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিভিন্ন ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে রাজ্য সরকার। মাত্র মাস কয়েক আগেও রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের জন্য মহার্ঘভাতা ঘোষণা করেছিল সরকার। কিন্তু এবার একেবারে অপ্রত্যাশিতভাবে রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের জন্য ১২ শতাংশ মহার্ঘভাতা ঘোষণা করা হলো। একলাফে ১২ শতাংশ মহার্ঘভাতা পাওয়ার আশা হয়তো স্বপ্নেও ভাবতে পারেন নি রাজ্যের কর্মচারী মহল। কিন্তু সেই অপ্রত্যাশিত স্বপ্নকে একেবারে বাস্তবে পর্যবসিত করে মঙ্গলবার সকাল ১১টা নাগাদ মহাকরণে সাংবাদিক সম্মেলন আয়োজন করে ঘোষণা দেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি জানান, ২০১৮ সালে বর্তমান সরকার প্রতিষ্ঠার পর সপ্তম কেন্দ্রীয় বেতন কমিশনের মতো পে মেট্রিক্সের ঘোষণা দিয়েছিল। তারপর কোভিড পিরিয়ডে দেশের অন্যান্য রাজ্যে যখন সরকারি কর্মচারীদের বেতন কমিয়ে দেয়া হয়েছিল, তখন ত্রিপুরা সরকার রাজ্যের সরকারি কর্মচারী ও পেনশনারদের জন্য ৩ শতাংশ ডিএ/ডিআর প্রদান করে।
পরবর্তী সময়ে চলতি বছরের আগস্ট মাসে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা রাজ্যের সরকারি কর্মচারী ও পেনশনারদের জন্য আরও ৫ শতাংশ ডিএ/ডিআর ঘোষণা দেন। বর্তমান সরকার বরাবরই কর্মচারীদের প্রতি আন্তরিক রয়েছে। তাই এবার রাজ্যের সরকারি কর্মচারী ও পেনশনারদের জন্য আরও ১২ শতাংশ ডিএ/ডিআর প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। ঘোষণা মোতাবেক ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে। জানুয়ারি মাসের বেতনের সাথে এই ডিএ/ডিআর পেয়ে যাবেন সরকারি কর্মচারী ও পেনশনারগণ। এর ফলে রাজ্যের ১ লক্ষ ৪ হাজার ৬০০ নিয়মিত সরকারি কর্মচারী এবং প্রায় ৮০ হাজার ৮০০ জন পেনশনার উপকৃত হবেন।
মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা আরও জানান সরকারি কর্মচারী ও পেনশনারদের ডিএ/ডিআর বৃদ্ধির পাশাপাশি ডিআরডব্লিও, এমআরডব্লিও (মান্থলি রেটেড ওয়ার্কার্স) এবং পিটিডব্লিওদের (পার্ট টাইম ওয়ার্কার) বেতন প্রায় ৫০ শতাংশের অধিক বৃদ্ধি করা হয়েছে। দেখা যায় ডিআরডব্লিও গ্রেড-সি আগে মাসিক বেতন পেতেন ৭ হাজার ২০ টাকা। নতুন ঘোষণায় এখন তারা বেতন পাবেন ১০ হাজার ৯২০ টাকা। এভাবে ডিআরডব্লিও টেকনিক্যাল স্টাফদের আগে মাসিক বেতন ছিল ৭ হাজার ২৮০ টাকা। এখন তারা পাবেন ১১ হাজার ১৮০ টাকা। ডিআরডব্লিও গ্রুপ-ডি আগে মাসিক বেতন পেতেন ৬৪৫৮.৪০ টাকা। এখন থেকে তারা পাবেন ১০,০১০ টাকা। পরিসংখ্যান থেকে বাদবাকি অনিয়মিত কর্মীদের মাসিক বেতন বিন্যাস উল্লেখ করা হলো। পার্মানেন্ট লেবারদের মাসিক বেতন ৬৭১৮.৪০ টাকা থেকে বেড়ে ১০,২৭০ টাকা, এমআরডব্লিও গ্রুপ-ডি কর্মীদের মাসিক বেতন ৭,৩৪৪ টাকা থেকে বেড়ে ১১,৩৮০ টাকা, প্রধান পুরোহিতদের মাসিক বেতন ৮,৯৪৪ টাকা থেকে বেড়ে ১২,৯৮০ টাকা, অধিকারিদের মাসিক বেতন ৮,৬৫৪ টাকা থেকে বেড়ে ১২,৬৯০ টাকা করা হয়েছে। পার্ট টাইম ওয়ার্কারদের (৪ ঘণ্টা কাজ) মাসিক বেতন ৫,৯০০ টাকা থেকে বেড়ে ৮,৯০০ টাকা, পার্ট টাইম ওয়ার্কারদের (৩ ঘণ্টা কাজ) মাসিক বেতন ৫,৬৭০ টাকা থেকে বেড়ে ৮,৬৭০ টাকা, পার্ট টাইম ওয়ার্কারদের (২ ঘণ্টা কাজ) মাসিক বেতন ৫,৪৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৮,৪৫০ টাকা করা হয়েছে। ভিলেজ চোকিদারদের মাসিক বেতন ৬,৭০০ টাকা থেকে বেড়ে ১০,১০০ টাকা, স্কুল মাদারদের মাসিক বেতন ৪,৮৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৭,৪৫০ টাকা, পুরোহিত, চন্তাই, প্রধান চণ্ডী পাঠক, পাচক, পুজারিদের মাসিক বেতন ৬,৯৯০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০,৫০০ টাকা, তল্লুয়া মালি, গার্ড, সিঙ্গার, সুইপার, গার্ডেনারদের মাসিক বেতন ৫,৯৪০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯,১৪০ টাকা, অ্যাডাল্ট লিটারেসি টিচারদের মাসিক বেতন ৪,১৮১.৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬,৪২০ টাকা, পার্ট টাইম ইন্সট্রাক্টরদের মাসিক বেতন ৪,০৭১.৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬,৩১০ টাকা এবং কমিউনিটি হেলথ গাইডদের মাসিক বেতন ৪,০৭১.৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬,৩১০ টাকা করার মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। এতে করে ৮ হাজার ৬০০ জনের অধিক অনিয়মিত কর্মী উপকৃত হবেন বলে সাংবাদিক সম্মেলনে আশা ব্যক্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা। গুরুত্বপূর্ণ এই সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী, উপ মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও এদিন উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব জিতেন্দ্র কুমার সিনহা।
Bicycle Distribution : শচীন্দ্রনগর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রীদের মধ্যে বাইসাইকেল বিতরণ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন