আগরতলা, ২৫ ডিসেম্বর : রাজ্যের প্রান্তিক জনপদের অন্তিম ব্যক্তির কাছে কেন্দ্রীয় ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্পের সুবিধা পৌঁছে দিতে প্রতি ঘরে সুশাসন অভিযানের সূচনা হয়েছিল। এই অভিযানে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প ও পরিষেবার সুবিধাও জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্মদিনে গত ১৭ সেপ্টেম্বর এই অভিযানের সূচনা হয়েছিল। আজ ২৫ ডিসেম্বর প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ভারতরত্ন অটল বিহারী বাজপেয়ীর জন্মদিনে তা সমাপ্ত হয়েছে। রবিবার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে প্রতি ঘরে সুশাসন অভিযানের সমাপ্তি অনুষ্ঠান হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা, উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা, বিধানসভার অধ্যক্ষ রতন চক্রবর্তী, পর্যটন মন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায়, তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, আগরতলা পুরনিগমের মেয়র দীপক মজুমদার, মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের সচিব ড. পি. কে চক্রবর্তী, ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন নিগমের চেয়ারম্যান, রাজ্য প্রশাসনের উচ্চপদস্থ আধিকারিকগণ, রাজ্যের ৮ জেলার জেলাশাসকগণ, বিভিন্ন ব্লকের বিডিওগণ।
এদিন প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ভারতরত্ন অটল বিহারী বাজপেয়ীর জন্মদিনে সুশাসন দিবসও পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে অতিধিগণ প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রতি ঘরে সুশাসন অভিযানের রিপোর্ট কার্ডের আবরণ উন্মোচন করেন। তাছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী এদিন 'আমার সরকার' প্রকল্পে জনসচেতনতামূলক একটি লিফলেটের আবরণ উন্মোচন এবং আমার সরকার' মোবাইল অ্যাপেরও উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা বলেন, প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ভারতরত্ন অটল বিহারী বাজপেয়ীর জন্মদিনে প্রতি ঘরে সুশাসন অভিযানের সমাপ্তি অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্যে জনকল্যানে সরকারের সুশাসনের বার্তা পৌঁছে দেওয়াই অন্যতম লক্ষ্য। অটল বিহারী বাজপেয়ী ছিলেন সুশাসনের এক উজ্জ্বল প্রতীক। তিনি ছিলেন একাধারে লেখক, কবি, সুবক্তা ও বিচক্ষণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। মানুষের কল্যাণে সারা জীবন কাজ করে গেছেন অটল বিহারী বাজপেয়ী। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রশাসনকে মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আমাদের লক্ষ্য একটাই এক ত্রিপুরা, শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গড়ে তোলা। মানুষের সাথে প্রশাসনের যোগসূত্র গড়ে তুলতে ত্রিপুরা সরকারের পঞ্চায়েত দপ্তরের মাধ্যমে নিয়ে আসা হয়েছে 'আমার সরকার' ওয়েব পোর্টাল। রাজ্যের গ্রামীণ প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এবং সরকারি প্রকল্প ও পরিষেবা সম্পর্কিত অভিযোগ নেওয়ার জন্য 'আমার সরকার' পোর্টাল এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গ্রামীন এলাকায় যেকোন ধরণের কাজ সম্পর্কিত অভিযোগ থাকলে বিনা খরচে পঞ্চায়েতের মাধ্যমে এই পোর্টালে অভিযোগ নথিভুক্ত করা যাবে। অভিযোগ নথিভুক্ত হওয়ার ৪ দিনের মধ্যে অভিযোগের সমাধান না হলে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি আসবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রতি বৃহস্পতিবার গ্রামপঞ্চায়েতের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সাথে সরকারি কর্মচারিরা গ্রামীন এলাকা পরিদর্শন করে মানুষের সমস্যা লিপিবদ্ধ করবেন। এই প্রক্রিয়ার নাম দেওয়া হয়েছে 'ভিলেজ ওয়াক'। প্রতি সোমবার গ্রামপঞ্চায়েতগুলিতে আমার সরকার দিবস পালন করা হবে। সেদিনও গ্রামের মানুষ তাদের অভিযোগ লিপিবদ্ধ করতে পারবেন।
অনুষ্ঠানে উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা বলেন, অটল বিহারী বাজপেয়ী দেশকে শ্রেষ্ঠ আসনে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। তাঁর কোন অহংকার ছিলনা। মানুষের জন্য কাজ করতে তিনি কখনও দলবাজিও করেননি। ভারতবর্ষকে একসূত্রে বেঁধে রাখার প্রচেষ্টা নিয়েছিলেন প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী। অটল বিহারী বাজপেয়ীর সেই স্বপ্ন ও প্রচেষ্টাকেই বাস্তবায়ণ করছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। উপমুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রতি ঘরে সুশাসন অভিযান রাজ্যে এক অভাবনীয় বাতাবরণ সৃষ্টি করেছে। এধরণের অভিযান রাজ্যে আগে কখনও হয়নি। মানুষ উৎসাহের সাথে অংশ নিয়েছেন এই অভিযানে। বিভিন্ন প্রকল্প ও পরিষেবার ১০০ শতাংশ সাফল্য নিয়ে আসতে মিশন মুডে কাজ হয়েছে এই অভিযানে। তিনি বলেন, এই সরকার জনকল্যাণে কাজ করছে। এটা মানুষ অনুভব করছেন। কোন রাজনৈতিক পরিচয় নয় প্রকৃত সুবিধাভোগীদেরই সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। অনুষ্ঠানে বিধানসভার অধ্যক্ষ রতন চক্রবর্তী বলেন, রাজ্যে উন্নয়নের দিশা এখন পরিবর্তন হয়েছে। প্রশাসন সরাসরি পৌঁছে যাচ্ছে মানুষের কাছে। এখন রাজনৈতক রঙ দেখে সুবিধাভোগী নির্বাচিত হয়না। তিনি বলেন, রাজ্যে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচি রূপায়িত হচ্ছে। রাজ্যে গড়ে উঠেছে ফরেন্সিক বিশ্ববিদ্যালয়, ডেন্টাল কলেজ, টিপন আইটির মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ত্রিপুরা এখন এক দ্রুত অগ্রসরমান রাজ্য।
প্রতি ঘরে সুশাসন অভিযানের সমাপ্তি অনুষ্ঠান উপলক্ষে দু'দিনব্যাপী প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবন প্রাঙ্গণে রাজ্যের ৮ জেলার প্রদর্শনীতে এই অভিযানের বিভিন্ন মুহুর্তের আলোকচিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা, পর্যটন মন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায়, তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, মুখ্যসচিব জে কে সিনহা এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের সচিব ড. পি কে চক্রবর্তী বলেন, প্রতি ঘরে সুশাসন অভিযানে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর নোডাল দপ্তর হিসেবে কাজ করেছে। এই অভিযানে ১০০ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানোর জন্য প্রশাসন গ্রামে গিয়ে কাজ করেছে। এই অভিযানে রাজ্যের ২৩ লক্ষাধিক মানুষ বিভিন্ন প্রকল্প ও পরিষেবার সুযোগ পেয়েছেন।
অনুষ্ঠানে প্রতি ঘরে সুশাসন অভিযানে স্লোগান প্রতিযোগিতা সহ অভিযানের সফল বাস্তবায়ণের জন্য জেলা, দপ্তর, নগরশাসিত সংস্থা ও ব্লকগুলিকে পুরস্কৃত করা হয়। ধলাই জেলা এই অভিযানে শ্রেষ্ঠ জেলার পুরস্কার পেয়েছে। দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ জেলার পুরস্কার পেয়েছে দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলা ও গোমতী জেলা। প্রথম শ্রেষ্ঠ দপ্তর হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছে সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা, কৃষি ও কৃষক কল্যাণ ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তর। দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ দপ্তরের পুরস্কার পেয়েছে পূর্ত দপ্তর ও বন দপ্তর। শ্রেষ্ঠ নগরশাসিত সংস্থার পুরস্কার পেয়েছে আগরতলা পুরনিগম ও খোয়াই পুর পরিষদ। দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ নগরশাসিত সংস্থার পুরস্কার পেয়েছে আমবাসা, কুমারঘাট, রাণীরবাজার ও ধর্মনগর পুর পরিষদ। শ্রেষ্ঠ ব্লকের পুরস্কার পেয়েছে অম্পি, পোয়াংবাড়ি, কাকড়াবন, অমরপুর, মনু ও বামুটিয়া ব্লক। দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ ব্লকের পুরস্কার পেয়েছে চড়িলাম, মোহনপুর, দশদা, গৌরনগর ও তুলাশিখর ব্লক। স্লোগান প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছেন অন্নেষা দে (প্রতাপগড়, আগরতলা), দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম হয়েছেন যথাক্রমে গোপীনন্দন দে (আগরতলা), প্রশান্ত সেন (বিলোনীয়া), সুধীর চন্দ্র সেন (খোয়াই) ও সিদ্ধার্থ হালদার (শিবনগর, আগরতলা)। অনুষ্ঠানে অতিথিগণ বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
Sishu Mela : আগরতলার এগিয়ে চলো সংঘ আয়োজিত শিশু মেলার উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন