আগরতলা, ২৮ মার্চ : রাজ্যে আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্থা স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে। এবারের নির্বাচন কোন রকম সন্ত্রাস বা ছাপ্পা ভোট, রেগিং ছাড়া শান্তিপূর্নভাবে সম্পন্ন হয়েছে। যা এবার রাজ্যে ইতিহাস গড়েছে। গত বিধানসভা নির্বাচন ঘোষণার পর থেকে রাজ্যে মোট ২৫৪টি বিভিন্ন ধরণের অভিযোগ নথিভূক্ত হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে মোট ২৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নোটিশ ইস্যু করা হয়েছে ৯৯৫টি। আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করার প্রশ্নে ১২৩০টি ক্ষেত্রে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়েছে পুলিশ। এছাড়া সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে মোট ১৪ হাজার ২৪০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ত্রয়োদশ বিধানসভার প্রথম অধিবেশনের তৃতীয় দিনে আজ রাজ্যপালের ভাষণের উপর আনীত ধন্যবাদসূচক প্রস্তাবের সমর্থনে আলোচনা করতে গিয়ে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। আলোচনার পর ধন্যবাদসূচক প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকার জনজাতিদের সার্বিক কল্যাণে খুবই আন্তরিক। বর্তমান রাজ্য সরকার সকলকে নিয়ে কাজ করতে চায়। জনজাতি কল্যাণে ইতিমধ্যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে রাজ্য সরকার। এর পাশাপাশি এডিসি এলাকার উন্নয়নেও বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
এদিন অধিবেশনের দ্বিতীয় বেলায় এই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে আলোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, জনজাতিদের উন্নয়নের প্রশ্নে আমবাসার নালিছড়ায় একটি একলব্য মডেল আবাসিক স্কুল নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া আরো ১৬টি একলব্য মডেল আবাসিক স্কুল গড়ে তোলা হচ্ছে। আগরতলায় কুমারী মধুতি রূপশ্রী আবাস, সাব্রুমের কলাছড়ায় একটি নতুন জনজাতি রেস্ট হাউজ গড়ে তোলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে ২০২২ এ জনজাতি গৌরব দিবস উদযাপন করা হয়েছে রাজ্যে। সেই সাথে জনজাতি সমাজপতিদের মাসিক ভাতা ২ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫ হাজার টাকা করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এদিন আলোচনা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী গত ২৪ মার্চ রাজ্যপালের ভাষণের জন্য রাজ্যপালকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি রাজ্যপালের ভাষণকে স্বাগত এবং পূর্ণাঙ্গ সমর্থন জানান। এর পাশাপাশি রাজ্যপালের ভাষণের উপর বক্তব্য রাখা সমস্ত সদস্যদের ধন্যবাদ জানান।
মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা আরো বলেন, এডিসি এলাকার সার্বিক উন্নয়নে বিশেষ নজর দিয়েছে রাজ্য সরকার। এজন্য প্রতি বছর অর্থ বরাদ্দ করা হচ্ছে। তথ্য দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ২০২১- ২২ অর্থ বছরে এডিসির উন্নয়নে অর্থ দপ্তর থেকে সরাসরি ৫৩৭.২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। সেই সাথে এডিসির উন্নয়নে কাজ করা আরো ৪৯টি দপ্তরের জন্য ৪৪০১.০৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। একইভাবে ২০২২ - ২৩ অর্থ বছরে এডিসিকে প্রায় ৫৪৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আর ৪৯টি দপ্তরের জন্য ৪,৪০৪ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকার চায় জাতি জনজাতি সকল অংশের মানুষ মিলে উন্নত ত্রিপুরা গড়ে তোলার।
এদিন আলোচনায় অংশ নিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পর্কেও কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ২২ বছর পর ডাক্তারদের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে চিকিৎসক এবং স্পেশালিস্টদের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া কোভিড মহামারীর সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে প্রায় ৬ লক্ষ পরিবারকে সাহায্য করা হয়েছে। শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে পিপিপি মডেলের কলেজ স্থাপন করা হয়েছে। বিদ্যাজ্যোতি প্রকল্পের আওতায় ১০০টি স্কুলকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সামাজিক ভাতা ১ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ হাজার টাকা করা হয়েছে। মহিলা ও শিশুদের উন্নয়নের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। চাকরির ক্ষেত্রেও মহিলাদের ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আলোচনার শেষ পর্যায়ে রাজ্যপালের ভাষনকে সমর্থন জানিয়ে আগামী দিনে রাজ্য সরকার উন্নয়নের দিশায় কাজ করে যাবে বলে আশা ব্যক্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
https://brahamakundabartaa.blogspot.com/2023/03/art-and-culture.html
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন