আগরতলা, ১২ জুলাই : রাজ্যে গত তিন বছরে বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের মাধ্যমে স্নাতকস্তরে বিজ্ঞান বিষয়ে ৬০ জন এবং বাণিজ্য বিষয়ে ১২জন শিক্ষক শিক্ষিকা নিয়োগ করা হয়েছে। বুধবার বিধানসভায় বিধায়ক রামু দাসের এক প্রশ্নের উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা এই তথ্য জানান। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্নোত্তর পর্বে জানান, শূন্য পদে নিয়োগ একটি চলমান প্রক্রিয়া। টিচার্স রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের মাধ্যমে শূন্য পদগুলি পূরণের জন্য নিয়মিত পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। সেখান থেকে প্রয়োজনীয় অনুমোদনের পরই শূন্য পদে শিক্ষক শিক্ষিকা নিয়োগ করা হয়।
বিরোধী দলনেতা অনিমেষ দেববর্মার আনা একটি প্রশ্নের লিখিত উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী সভায় জানান, বর্তমানে রাজ্যের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে ১৩০০ জন ককবরক শিক্ষক রয়েছেন। বিধায়ক কিশোর বর্মণের আনা এক প্রশ্নের জবাবে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ৫৭টি পিএম শ্রী (প্রধানমন্ত্রী স্কুলস ফর রাইজিং ইন্ডিয়া) স্কুল চালু করার বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষিত প্রকল্প বিষয়ে রাজ্য সরকারকে জানানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় আর্থিক অনুমোদন পেলেই এই প্রকল্প অনুসারে রাজ্যের অধিকাংশ ব্লক এলাকায় বিদ্যমান এই স্কুলগুলির ছাত্রছাত্রীদের জন্য হোস্টেল এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের থাকার জন্য আবাসন নির্মাণ ইত্যাদি পরিকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ শুরু করা হবে।
বিধায়ক ইসলাম উদ্দিনের এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী জানান, চলতি অর্থবছরে ৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে উন্নীত করা হয়েছে। বিধায়ক অভিষেক দেবরায়ের এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে তিনি জানান, রাজ্যে সৈনিক স্কুল খোলার জন্য একটি প্রস্তাব রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। বিরোধী দলনেতা অনিমেষ দেববর্মার এক প্রশ্নের জবাবে মুখ্যমন্ত্রী জানান, সমগ্র শিক্ষা প্রকল্পের অধীনে বর্তমানে ২০৫টি বিদ্যালয়ে ভেকেশন্যাল এডুকেশন কোর্স চালু আছে। বিধায়ক নির্মল বিশ্বাসের প্রশ্নের লিখিত উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী জানান, বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তর পরিচালিত অনুদান প্রাপ্ত উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২৯টি। এর মধ্যে বর্তমান অর্থবছরে উদয়পুরের রমেশ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় নতুন বাড়ি নির্মাণের জন্য আর্থিক অনুমোদন পাওয়া গেছে। বিরোধী দলনেতা অনিমেষ দেববর্মার প্রশ্নের লিখিত উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী সভায় জানান, রাজ্যের বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোর ছাত্রছাত্রীদের স্কুল ফি-র উপর রাজ্য সরকারের সরাসরি কোন নিয়ন্ত্রণ এই। তবে বিভিন্ন বেসরকারি বিদ্যালয়ের স্থাপনা এবং পরিচালনা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনার জন্য বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের তরফে সম্প্রতি একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সুপারিশ পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
এদিন রাজ্য বিধানসভায় বিধায়ক রামু দাসের এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী তথা শিক্ষা দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা জানান, রাজ্যে বর্তমানে ৭টি ডিস্ট্রিক্ট অব এডুকেশন এন্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (ডায়েট) রয়েছে। উত্তর ত্রিপুরা জেলার পানিসাগরে আরও একটি ডায়েট ইনস্টিটিউট স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
এদিকে বিরোধী দলনেতা অনিমেষ দেববর্মার এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে মৎস্যমন্ত্রী সুধাংশু দাস জানান, বর্তমানে রাজ্যে ৩৯৫টি মৎস্য বাজার রয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে নতুন করে আরও ৩টি মৎস্য বাজার নির্মাণ করা হবে। তিনি জানান যে ৩টি জায়গায় এই মৎস্য বাজার নির্মাণ করা হবে সেগুলি হচ্ছে অমরপুর মহকুমায় তিনঘড়িয়া মৎস্য বাজার, খোয়াই মহকুমায় বাচাইবাড়ি মৎস্য বাজার এবং মোহনপুর মহকুমায় শনিতলা হাট মৎস্য বাজার।
বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা অনিমেষ দেববর্মার এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে খাদ্য ও জনসংভরণ দপ্তরের মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী জানান, রাজ্যে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত গণবন্টন ব্যবস্থার আওতায় ২,০৫৩টি ন্যায্যমূল্যের দোকান রয়েছে। তিনি জানান, ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত রাজ্যে মোট ১৮২০টি ন্যায্যমূল্যের দোকান ছিল। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত আরও ২৩৩টি নতুন ন্যায্যমূল্যের দোকান খোলায় বর্তমানে রাজ্যে রেশন দোকানের সংখ্যা ২,০৫৩ দাড়িয়েছে যা প্রয়োজনের নিরিখে পর্যাপ্ত বলা যায়। তবে কোথাও যদি নতুন রেশন দোকান খোলার কোন ধরণের প্রস্তাব আসে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে দপ্তরের তরফে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
খাদ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্যের সরকারি ন্যায্যমূল্যের দোকানে বর্তমানে পর্যাপ্ত পরিমাণে রেশনসামগ্রী মজুত রয়েছে। প্রতি মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে রাজ্যের সকল রেশন দোকানে গণবন্টন ব্যবস্থায় মাসিক বরাদ্দের চাল, আটা ও অন্যান্য রেশন সামগ্রী পৌছানোর ব্যবস্থা করা হয় এবং সাধারণ ভোক্তাগণ নিয়মিত সঠিকভাবে রেশন সামগ্রী পাচ্ছেন। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে গণবন্টন ব্যবস্থার অধীনে মুসুর ডাল, চিনি এবং লবন রেশন দোকানে সরবরাহের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সাপ্লায়ার দ্বারা বহি:রাজ্য থেকে আমদানির ক্ষেত্রে পরিবহণজনিত সমস্যা, পন্যদ্রব্যের গুণগতমান পরীক্ষা ইত্যাদি কোন কারণে সাময়িক বিলম্ব হলে যদিও তা বিরলতম ঘটনা, পরবর্তীতে যখন রেশন দোকানে এই দ্রব্যগুলির যোগান স্বাভাবিক হয়, ভোক্তাদের তাদের নির্দিষ্ট মাসিক বরাদ্দ যথাযথভাবে বিতরণ করা হয়।
খাদ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্যের সমস্ত রেশন দোকানে ই-পস মেশিনে ভোক্তাদের আধার প্রমাণীকরণের মাধ্যমে রেশন বিতরণ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এর ফলে ভোক্তাদের মাসিক বরাদ্দের রেশন সামগ্রী সঠিকভাবে বিতরণ নিশ্চিন্ত করা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি প্রত্যেক মহকুমায় দপ্তরের সংশ্লিষ্ট আধিকারিক সহ খাদ্য পরিদর্শকরা প্রতিনিয়ত রেশন দোকানগুলির উপর কড়া নজরদারি রাখছেন এবং কোথাও কোন ধরণের অবৈধ কার্যকলাপ পরিলক্ষিত হলে দপ্তর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন