আগরতলা, ২৫ মার্চ : বিধানসভা অধিবেশনে মঙ্গলবার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য পেশ করা ব্যয় বরাদ্ধের প্রস্তাবের উপর সাধারণ আলোচনায় সরকার পক্ষ এবং বিরোধীদের ৯ জন বিধায়ক অংশ নেন। বাজেটকে সমর্থন জানিয়ে আজ আলোচনা শুরু করেন বিধায়ক রঞ্জিত দাস। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে রাজ্যের অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। বাজেটকে সমর্থন করে বিধায়ক রঞ্জিত দেববর্মা বলেন, কৃষি, উচ্চশিক্ষা এবং স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প রাজ্য সরকার রূপায়ণ করছে। বিধায়ক অভিষেক দেবরায় রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো, পর্যটন ক্ষেত্র প্রভৃতির উন্নয়নে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন কাজের কথা তুলে ধরেন। প্রস্তাবিত বাজেটকে সমর্থন জানিয়ে তিনি বলেন, এই বাজেট জনমুখী।
বিধায়ক বিশ্বজিৎ কলই প্রস্তাবিত বাজেট সমর্থন জানিয়ে বলেন, এই বাজেট জনমুখী এবং কল্যাণকর। আলোচনায় তিনি ক্রীড়া পরিকাঠামোর উন্নয়নে রাজ্য সরকারের পরিকল্পনা রূপায়ণের কথা তুলে ধরেন। বিধায়ক শম্ভুলাল চাকমা প্রস্তাবিত বাজেট সমর্থন জানিয়ে বলেন, বর্তমান সরকার মানবিক সরকার। রাজ্য সরকার ত্রিপুরাকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাচ্ছে। জনজাতিদের কৃষ্টি, সংস্কৃতির রক্ষণাবেক্ষণে কাজ করছে। বিধায়ক ভগবানচন্দ্র দাস নারী, কৃষক, গরীব অংশের মানুষের উন্নয়নে রাজ্য সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন। প্রস্তাবিত বাজেট সমর্থন করে তিনি বলেন, এই বাজেট গরীব কল্যাণের বাজেট।
বিধানসভায় পেশ করা বাজেটের উপর অন্যান্যদের মধ্যে আলোচনা করেন বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ, বিধায়ক দীপঙ্কর সেন এবং বিধায়ক ইসলাম উদ্দীন।
এদিকে আজ বিধানসভায় রেফারেন্স পিরিয়ডে বিধায়িকা নন্দিতা রিয়াংয়ের জনস্বার্থে আনা একটি জরুরি নোটিশের উপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে খাদ্য, জনসংভরণ ও ক্রেতাস্বার্থ বিষয়ক দপ্তরের মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী জানান, রাজ্যের সমস্ত রেশন কার্ডকে স্মার্ট কার্ডের ন্যায় পিভিসি কার্ডে রূপান্তরিত করার কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। আগরতলা পুরনিগম এলাকায় পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে প্রথমে এই কার্ড বিলি করা হবে। এজন্য ১ লক্ষ ৫০ হাজার কার্ড ইতিমধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। আগামী মাসখানেকের মধ্যে এই কার্ড ভোক্তাদের মধ্যে প্রদান করা হবে। তিনি জানান, রাজ্যে ২ হাজারের উপর ন্যায্যমূল্যের দোকান রয়েছে। এগুলিকে ইতিমধ্যেই ডিজিটাইজেশন করা হয়েছে। রেশনশপগুলিতে ডিজিটাইজেশন করার পর পুরোনো রেশন কার্ডগুলিকে পাল্টে ভোক্তাদের পিভিসি কার্ড দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য চলতি বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে ভোক্তাদের ই-কেওয়াইসি করার কাজ সম্পূর্ণ করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সব অংশের জনগণের মধ্যে এখনও এই বিষয়ে সচেতনতা তৈরি না হওয়ায় এই কাজ যত দ্রুততার সঙ্গে হওয়ার কথা ছিল তা হচ্ছে না। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে বেশি সমস্যা হচ্ছে। শহরাঞ্চলেও ভোক্তাদের সবাই রাজ্যে না থাকায় ই-কেওয়াইসি তৈরির কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। রেশন ডিলারগণ ভোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করছেন।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের বর্তমান সরকার সমস্ত কাজে স্বচ্ছতা বজায় রাখার চেষ্টা করছে। এক দেশ এক রেশন কার্ড প্রথা এখানেও চালু হয়েছে। রাজ্যে ৯ লক্ষ ৮৩ হাজার রেশন কার্ড রয়েছে। সবগুলিকেই পিভিসি কার্ডে রূপান্তর করা হবে। ৩১ মার্চ অব্দি কত শতাংশ ভোক্তার ই-কেওয়াইসি হয়েছে তা দেখার পর প্রয়োজনে কেওয়াইসি করার সময়সীমা বাড়ানো হবে।
অপরদিকে বিধায়ক শম্ভুলাল চাকমার এক প্রশ্নের উত্তরে বিদ্যুৎমন্ত্রী রতনলাল নাথ জানান, রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় যেসব পরিবারে এবং পাবলিক প্লেসে এখনও বিদ্যুৎ পৌঁছেনি সেখানে ভারত সরকারের জনজাতি কল্যাণ দপ্তরের ধরতি আবা জনজাতীয় উৎকর্ষ অভিযান (ডিএ-জেজিইউএ) প্রকল্পে এবং পিএম-জনমন ও পিএম-ডিভাইন প্রকল্পে ত্রিপুরা রাজ্য বিদ্যুৎ নিগম এবং ট্রেডার মাধ্যমে সোলার মাইক্রোগ্রিড পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা বিদ্যুৎ দপ্তর নিয়েছে। তিনি জানান, ডিএ-জেজিইউএ প্রকল্পটি চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি রাজ্যের ডিস্ট্রিবিউশন রিফর্ম কমিটি থেকে অনুমোদন পাওয়া গেছে। এখন বিষয়টি শুধু মন্ত্রিসভার অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। রাজ্য মন্ত্রিসভার অনুমোদনের জন্য প্রস্তাবও পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রিসভার অনুমোদন পেয়ে গেলে ডিএ-জেজিইউএ প্রকল্পের কাজটি হাতে নেওয়া হবে। ২০২৫ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে এই কাজটি সম্পন্ন হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎমন্ত্রী জানান, এছাড়া পিএম-জনমন ও পিএম-ডিভাইন প্রকল্পে সোলার মাইক্রোগ্রিডে ট্রেডার মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কাজ এগিয়ে চলেছে। পিএম-জনমন প্রকল্পে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলতি বছরের আগস্ট মাসের মধ্যে এবং পিএম-ডিভাইন প্রকল্পে চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।
বিধায়ক নির্মল বিশ্বাসের অন্য একটি প্রশ্নের লিখিত উত্তরে বিদ্যুৎমন্ত্রী জানান, সম্প্রতি ত্রিপুরা রাজ্য বিদ্যুৎ নিগমের (টিএসইসিএল) মাধ্যমে পিএম-জনমন প্রকল্পে ১১ হাজার ৬৯২টি পরিবারে এবং পিএম-ডিভাইন প্রকল্পে ট্রেডার মাধ্যমে ৩৭২টি পরিবারে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে এই দুটি সংস্থার পক্ষ থেকে ১২ হাজার ৬৪টি পরিবারকে বিদ্যুতায়নের আওতায় আনা হয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন