আগরতলা, ০৩ জুলাই : রাজ্যের অর্থনৈতিক বিকাশের অন্যতম ভিত্তি হচ্ছে কৃষি। আমাদের দেশের অর্থনীতিও কৃষি নির্ভর। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার কৃষির বিকাশ ও কৃষকদের কল্যাণে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। আজ আগরতলার প্রজ্ঞা ভবনে রাজ্যের কৃষি ও উদ্যানজাত ফসল বিষয়ক জাতীয় সম্মেলন এবং ক্রেতা ও বিক্রেতাদের বৈঠকের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা একথা বলেন। ভারত সরকারের কৃষিজ পণ্য রপ্তানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এপিইডিএ) এবং রাজ্য সরকারের উদ্যান ও ভূমি সংরক্ষণ অধিকারের যৌথ উদ্যোগে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের অর্থনীতি মূলত কৃষিভিত্তিক। রাজ্যে রাবার, বাঁশ, চা, প্রাকৃতিক গ্যাস, কৃষি ও উদ্যানজাত ফসলের বিপুল সম্ভার রয়েছে। রাজ্যের আনারস আমাদের দেশের বিভিন্ন রাজা সহ বিদেশে ত্রিপুরার পরিচিতি বহণ করছে। গত কয়েক বছর ধরে রাজ্যে উৎপন্ন আনারস, সুগন্ধি লেবু বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে।
সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, কেরালার পর ত্রিপুরা হচ্ছে দেশের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম রাবার উৎপাদক রাজ্য। বর্তমানে রাজ্যে রাবার উৎপাদনের পরিমান প্রায় ৯৪ হাজার মেট্রিকটন। রাজ্যে আধুনিক স্মোক হাউস স্থাপনের মাধ্যমে উন্নতমানের গ্রেডেড রাবার শিট উৎপাদনের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। রাবার কাঠ ও রাবার ভিত্তিক আসবাবপত্রসমূহ রপ্তানি করারও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। রাজ্যের অর্থনৈতিক বিকাশে রাবারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ভাষনে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, রাজ্যে ২১ প্রজাতির বাঁশ রয়েছে। নয়াদিল্লিতে নবনির্মিত সংসদ ভবনেও ত্রিপুরার বাঁশের নির্মিত টাইলস বসানো হয়েছে, যা ত্রিপুরার জন্য অত্যন্ত গৌরবের। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের আবহাওয়া উদ্যানজাত ফসল চাষের অনুকূল। রাজ্যে ১২ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে ফলচাষ করা হচ্ছে। ১৬ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে সব্জি চাষ করা হচ্ছে। আনারস ও বিভিন্ন উদ্যানজাত ফসল বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। বিদেশে আনারস রপ্তানির জন্য আগরতলায় একটি ইন্টিগ্রেটেড প্যাক হাউস স্থাপন করা হয়েছে। তাছাড়াও রাজ্যে বিদেশী ফুল সহ বিভিন্ন রকমের ফুল চাষ করা হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে উৎপাদিত কৃষি ও উদ্যানজাত ফসল বাজারজাতকরণের উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। উৎপাদিত ফসল সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে রাজ্যে ১৩টি সৌরভিত্তিক শীতলকক্ষ তৈরী করা হচ্ছে। সিপাহীজলায় ২৫ লক্ষ উন্নতমানের সব্জির চারা উৎপাদন করে রাজ্যের কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। রাজ্য সরকার কর্মসংস্থানের উপর গুরুত্ব দিয়ে বিনিয়োগকারীদের জন্য স্টেট ইনসেনটিভ পলিসির অধীনে বিভিন্ন শিল্প সহায়ক সুবিধা প্রদান করছে। তিনি বলেন, কৃষিক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী কৃষক সম্মান নিধি প্রকল্পে রাজ্যের ২ লক্ষ ৪৭ হাজারের ও বেশি কৃষককে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। কৃষক বন্ধু কেন্দ্রের মাধ্যমে কৃষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রায় ১০ লক্ষ কৃষককে প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনার আওতায় আনা হয়েছে। কেসিসি'র মাধ্যমেও কৃষকদের ঋন প্রদান করা হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে রাজ্যে ৬টি জাতীয় সড়কের কাজ প্রায় শেষের পথে। ইন্টারনেট পরিষেবায়ও ত্রিপুরা যথেষ্ট ভাল অবস্থানে রয়েছে। প্রায় ১২টি এক্সপ্রেস ট্রেন রাজ্য থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলাচল করছে। তাছাড়া রয়েছে আগরতলার মহারাজা বীর বিক্রম বিমানবন্দর। সারুমে নবনির্মিত মৈত্রী সেতু দিয়ে বাংলাদেশের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হলে এটি হবে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার প্রবেশদ্বার। এর ফলে ত্রিপুরা সহ উত্তরপূর্বাঞ্চলের চেহারা বদলে যাবে বলে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ভাষণে উল্লেখ করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কৃষি ও কৃষক কলাণ দপ্তরের মন্ত্রী রতন লাল নাথ বলেন, কৃষকদের আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে রাজ্য সরকার কাজ করছে। ইতিমধ্যেই রাজ্যের কৃষকদের আয় বেড়েছে। রাজ্যের উৎপাদিত উদ্যানজাত ফসল যেমন আনারস, সুগন্ধী লেবু, কাঁঠাল বিশ্বের বাজারে জনপ্রিয় হয়েছে। রাজ্যের আনারস দিল্লি, মুম্বাই, কোলকাতা ও গুয়াহাটিতে আয়োজিত বিভিন্ন প্রদর্শনীতে প্রদর্শিত হয়েছে। চলতি বছরের ১৮ মে দিল্লি হাটে রাজ্যের জৈব পদ্ধতিতে উৎপাদিত আনারস ব্র্যান্ডের সূচনা হয়েছে। আগামী ২১ জুলাই বারাণসীতেও এধরণের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায়, কৃষিজ পণ্য রপ্তানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এপিইডিএ)-এর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার বিদ্যুৎ বড়ুয়া। বক্তব্য রাখেন উদ্যান ও ভূমি সংরক্ষণ দপ্তরের অধিকর্তা ড. ফনিভূষণ জমাতিয়া। ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন এপিইডিএ-র গুয়াহাটিস্থিত কার্যালয়ের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার সুনীতা রায়। এছাড়াও ছিলেন কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের অধিকর্তা শরদিন্দু দাস। উদ্বোধনী পর্ব শেষে মুখ্যমন্ত্ৰী সহ অতিথিগণ বিভিন্ন প্রদর্শনী স্টলগুলি পরিদর্শন করেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন