আগরতলা, ০২ জুলাই : শেষ হলো রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী খার্চি উৎসব । ৭ দিনব্যাপী চলা এবারের উৎসবে অন্যান্য দিন বৃষ্টির জন্য তেমনটা ভিড় পরিলক্ষিত না হলেও, রবিবার উৎসবের শেষ দিনে গোটা খয়েরপুর ভাসলো জন ঢলে। এদিন দুপুর থেকে পুণ্যার্থীদের ব্যাপক সমাগম হয় চতুর্দশ দেবতা মন্দির প্রাঙ্গনে । দূর দূরান্ত থেকে আগত পূর্ণর্থীরা দীর্ঘক্ষন লাইনে দাঁড়িয়ে ভোগ নিবেদন করেন। সন্ধ্যের পর অনেকে পুরো মেলা চত্বর ঘুরে দেখার সাহস পাননি। চতুর্দশ দেবতার বাড়িতে যাওয়ার মূলত দুটো সড়কেই ব্যাপক যানজট দেখা দেয়। আসাম আগরতলা সড়কে মোটরস্ট্যান্ড থেকে খয়েরপুর পর্যন্ত পৌঁছতে অনেক যানবাহনেরই দু'ঘণ্টার উপরে লেগে যায়। এতে অনেকেই অস্বস্তি বোধ করতে থাকেন। খার্চি উৎসবে যাওয়ার জন্য অনেকেই বিকল্প সড়ক হিসেবে বলদাখাল সড়কটি ধরে থাকেন । কিন্তু খার্চি মেলার অন্তিম দিনে এই সড়কটিতেও ব্যাপক যানজট দেখা দেয়। মূলত এই দিনের ভীড় সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে বলে অনেকেই মনে করছেন।
এদিকে সাত দিনব্যাপী চলা ঐতিহ্যবাহী এই উৎসবের সমাপ্তি উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় কৃষ্ণমালা মঞ্চে। ঐতিহ্যবাহী খার্চি উৎসব ও প্রদর্শনীর সমাপ্তি অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সমাপ্তি অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, দেখতে দেখতে ৭দিন কেটে গেল। খার্চি উৎসবের আনন্দ শেষ হয়ে গেলেও আমরা আগামী বছরের অপেক্ষায় থাকব। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বলেন, খার্চি উৎসবের আলোয় আমাদের পারস্পরিক মেলবন্ধনও সুদৃঢ় হয়। নানা ভাষা কৃষ্টি ও সংস্কৃতির মানুষ এখানে মিলিত হন। আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীও আমাদের সমগ্র দেশকে সাংস্কৃতিক ঐক্যের সুরে বাঁধতে চান। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শুধু আমাদের দেশ নয় সমগ্র বিশ্বকেও এক সুরে বাঁধতে চান।
সমাপ্তি অনুষ্ঠানে সমবায় মন্ত্রী শুক্লাচরণ নোয়াতিয়া বলেন, খাচি উৎসব আমাদের রাজ্যের জাতি জনজাতি সম্প্রদায়ের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির মিলন উৎসব। এই উৎসবের মধ্য দিয়ে সংস্কৃতির বিকাশ যেমন হয় তেমনি মেলাকে কেন্দ্র করে রোজগারের সুযোগ ঘটে। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিশেষ অতিথি সমাজসেবী রাজীব ভট্টাচার্য। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন খার্চি উৎসব কমিটির চেয়ারম্যান বিধায়ক রতন চক্রবর্তী ও খার্চি উৎসব কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান পুরাতন আগরতলা পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ শীল।
অনুষ্ঠানে দিব্যাঙ্গ মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের আর্থিক সহায়তা ও সংবর্ধনা দেওয়া হয়। তাছাড়াও তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর এবং রাজস্ব দপ্তরের উদ্যোগে আয়োজিত বসে আঁকো প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কৃত করা হয়। সমাপ্তি অনুষ্ঠানে ঐতিহ্যবাহী খাটি উৎসব ও প্রদর্শনী উপলক্ষে অংশগ্রহণকারী প্রদর্শনী স্টলগুলিকে পুরস্কৃত করা হয়।
এদিকে মেলার সমাপ্তি দিনেও চতুর্দশ দেবতা মন্দির প্রাঙ্গণের কৃষ্ণমালা মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় বর্ণময় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সকালে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের শিল্পীগণ সহ ৬টি সাংস্কৃতিক সংস্থার শিল্পীগণ সমবেত সঙ্গীত ও সমবেত নৃত্য পরিবেশন করেন। তাছাড়া আড়ালিয়া লোকরঞ্জন শাখার শিল্পীগণ ত্রিনাথ পাঁচালী পাঠ করেন। পূর্ণিমা দাস ও তার দল মঞ্চস্থ করে ‘রাধার মানভঞ্জন' যাত্রা পালা। বিকেলে কৃষ্ণমালা মঞ্চে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর এবং শ্রাবন্তী শর্মা ও তার দল সমবেত সঙ্গীত পরিবেশন করেন। তাছাড়াও হাবেলী মুক্ত মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় শিশু উৎসব। আগের দিন রাতে কৃষ্ণমালা মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়ার শিল্পীগণ ছৌ-নৃত্য পরিবেশন করেন।
National Doctors' Day : চিকিৎসকদের উপর আক্রমণ কখনও বরদাস্ত না করার হুঁশিয়ারি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন