আগরতলা, ১৩ সেপ্টেম্বর : সার্বজনীন স্বাস্থ্য পরিষেবা সর্বত্র পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু বুধবার সারাদেশে আয়ুষ্মান ভবঃ অভিযানের ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মান্ডাভিয়া, বিভিন্ন রাজ্যের রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীগণ ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন। আয়ুমান ভবঃ অভিযানের ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করে রাষ্ট্রপতি বলেন সমাজের কোনও ব্যক্তি যাতে স্বাস্থ্য পরিসেবা থেকে বঞ্চিত না হয় সে উদ্দেশ্যেই এই অভিযান কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের প্রতিটি নাগরিক সুস্থ থাকলেই সুস্থ ভারত গঠন করা সম্ভব হবে। স্বাস্থ্যক্ষেত্রের উন্নয়নে বর্তমানে আমাদের দেশ সমগ্র বিশ্বেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু আয়ুষ্মান ভব অভিযান কর্মসূচি সফলভাবে রূপায়ণে এগিয়ে আসার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
দেশব্যাপী আয়ুষ্মান ভবঃ অভিযানের উদ্বোধনের পর মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা সচিবালয়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজ্যব্যাপী এই অভিযানের সূচনা করেন। মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব ড. দেবাশিষ বসু গ্রামোন্নয়নের দপ্তরের সচিব সন্দীপ আর রাঠোর, সমাজকল্যণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের সচিব তাপস রায়, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের মিশন অধিকর্তা ডি কে চাকমা প্রমুখ এই ভার্চুয়ালি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যই হচ্ছে মূল সম্পদ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির স্বপ্ন হল সুস্থ ভারত গড়ে তোলা। তাই সমাজের অন্তিম ব্যক্তির নিকট স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েই প্রধানমন্ত্রী নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করে যাচ্ছেন। গ্রাম এবং শহর অঞ্চলে স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য পরিষেবা সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার উদ্দেশ্যেই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক আয়ুমান ভক্ত অভিযান কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। রাজ্য সরকারও আয়ুষ্মান ভবঃ কর্মসূচির অঙ্গ হিসেবে আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ থেকে ২ অক্টোবর, ২০২৩ পর্যন্ত সেবা পক্ষকাল কর্মসূচির আয়োজন করবে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক প্রচেষ্টায় দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। সম্প্রতি ভারতে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনেও দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রশংসিত হয়েছে। এছাড়াও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে দেশের সবচেয়ে বড় যোজনা আয়ুষ্মান ভারত প্রধানমন্ত্রী জনআরোগ্য যোজনা সারা বিশ্বেই প্রশংসিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক প্রচেষ্টায় চালু দেশের সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্য প্রকল্প আয়ুষ্মান ভারত জন আরোগ্য যোজনায় রাজ্যে প্রায় ১৩ লক্ষ আয়ুষ্মান কার্ড সুবিধাভোগীদের প্রদান করা হয়েছে। ২ লক্ষের উপর সুবিধাভোগী এই প্রকল্পের সুযোগ লাভ করেছে। আয়ুষ্মান ভারত প্রধানমন্ত্রীর জন আরোগ্য যোজনায় রাজ্যের যে সমস্ত পরিবার আওতাভুক্ত হতে পারেননি তাদের জন্য রাজ্য সরকার মুখ্যমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা নামে একটি নতুন প্রকল্প চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে। এরজন্য চলতি অর্থবর্ষের বাজেটেও প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান রাখা হয়েছে।
ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সমাজের অন্তিম ব্যক্তির কাছে স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দিতে রাজ্য সরকার স্বাস্থ্য পরিকাঠামোগত উন্নয়নের উপর গুরুত্ব দিয়েছে। জেলা ও মহকুমা থেকে জিবি হাসপাতাল এবং আই জি এম হাসপাতালে রেফারেল রোগীর চাপ কমানোর উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলিকে শক্তিশালী করা হচ্ছে। রাজ্যের মৌলিক স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে শক্তিশালী করার জন্য ১০০টি নতুন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এরজন্য ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের বাজেটেও প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান রাখা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য পরিকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত সকল স্তরের স্বাস্থ্যকর্মীদের সমস্যা সমাধানেও রাজ্য সরকার আন্তরিক। রাজ্যে বর্তমানে মেডিক্যাল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ, নার্সিং কলেজ সহ সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। সেগুলিকে ভিত্তি করেই রাজ্যে মেডিক্যাল হাব গড়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে অনুকূল পরিবেশ তৈরি হওয়ার ফলেই বহিরাজ্যের উদ্যোগীরাও রাজ্যে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব ড. দেবাশিষ বসু বলেন, আয়ুষ্মান ভবঃ কর্মসূচির অঙ্গ হিসেবে আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ থেকে সেবা পক্ষকাল কর্মসূচি সংগঠিত করা হবে। যা চলবে ২ অক্টোবর ২০২৩ পর্যন্ত। এই সেবা পক্ষকালে আয়ুষ্মান আপকে দুয়ার, আয়ুমান মেলা এবং আয়ুমান সভা- এই তিনটি কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে আয়ুমান আপকে দুয়ার কর্মসূচির মাধ্যমে রাজ্যের প্রতিটি গ্রাম এবং শহরাঞ্চলে আয়ুষ্মান ভারত প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনার অন্তর্গত সুবিধাভোগীদের আয়ুমান কার্ড প্রদান করা হবে। আয়ুষ্মান মেলা কর্মসূচির মাধ্যমে স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান এবং মেডিক্যাল কলেজের উদ্যোগে স্পেশালিস্ট সার্ভিসের মাধ্যমে বিভিন্ন স্বাস্থ্য বিষয়ক যেমন, প্রসূতি ও স্ত্রী রোগ, শিশু রোগ সার্জারি, চোখ, নাক-কান-গলা, মানসিক স্বাস্থ্য ইত্যাদির উপর সচেতনতা এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান করা হবে। এই আয়ুষ্মান মেলা বিভিন্ন হেলথ এন্ড ওয়েলনেস সেন্টার এবং সামাজিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রতি সপ্তাহের শনিবারে সংগঠিত করা হবে। আয়ুমান সভা কর্মসূচির মাধ্যমে ২ অক্টোবর, ২০২৪ এ ভিলেজ হেলথ এন্ড নিউট্রেশন কমিটি গ্রামীণ এলাকায় গ্রাম সভা এবং শহরের স্থানীয় সংস্থার নেতৃত্বে শহরাঞ্চলের জন্য ওয়ার্ড সভার আয়োজন করে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং স্বাস্থ্য পরিসেবা প্রদান করবেন। এই কর্মসূচিতে গ্রাম ও শহরাঞ্চলে আয়ুষ্মান কার্ড, আভা আই-ডি, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, টীকাকরণ, যক্ষ্মা রোগ সনাক্তকরণ, রক্তাল্পতা, উচ্চরক্তচাপ, মধুমেহ ইত্যাদি বিষয়ে সচেতনতা এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান করা হবে।পাশাপশি বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, রক্তাল্পতা এবং সংক্রামক রোগ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার উদ্দেশ্যে বিশেষ আলোচনা করা হবে। যক্ষ্ম রোগ নির্মলীকরণেও আলোচনা হবে এবং আভা আই ডি'র সুবিধা সম্পর্কেও মানুষকে অবগত করা হবে। এছাড়াও সেবা পক্ষকালের অঙ্গ হিসাবে স্বচ্ছতা অভিযান, অঙ্গদান অঙ্গীকার, রক্তদান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে এবং বিভিন্ন সূচকের ভিত্তিতে একটি গ্রাম বা একটি নগরকে আয়ুমান গ্রাম পঞ্চায়েত বা আয়ুষ্মান নগর ওয়ার্ড এ সম্মানিত করা হবে।
রাজ্যব্যাপী আয়ুষ্মান ভব কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক সূচনার পর নি-ক্ষয় মিত্র হিসাবে টিবি রোগীদের সহায়তা করার ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় পদক্ষেপের জন্য ৩ জন নি-ক্ষয় মিত্রকে এবং অঙ্গদানের মতো মানবিক কাজে অঙ্গীকারদ্ধ হয়েছেন এমন ৩ জনকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। সম্মাননাস্বরূপ তাদের হাতে স্মারক উপহার তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন