আগরতলা, ১৫ এপ্রিল : আগরতলা সন্নিহিত মধুবন রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা তথা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ শ্রদ্ধেয় পরেশ চন্দ্র চক্রবর্তী অগ্নিদগ্ধ হয়ে রবিবার জিবি হাসপাতালে ভর্তি হন। আশ্রমের ভিতরে ঘুমের মধ্যে আকস্মিক ভাবে তাঁর শরীরে আগুন লেগে যায়। বই পড়তে পড়তে তিনি ঘুমিয়ে পড়তেই ঠাকুরের মোম থেকে আগুন লেগে যায় পরনের উত্তরীয়তে। পরে জিবিপি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সোমবার সকাল ৭:২০ মিনিটে প্রয়াত তিনি। মৃত্যু কালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।
পরেশ চন্দ্র চক্রবর্তী বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলার এক ছোট্ট গ্রামে ১৯৩৬ সালের ৩রা আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা হরলাল চক্রবর্তী কুমিল্লার ঈশ্বর পাঠশালায় ভর্তি করেন । সেখানেই শুরু হয় তাঁর পড়াশোনা । পরেশ চক্রবর্তী যখন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী, তখনই তাঁর পিতা প্রয়াত হন। তারপরেও অত্যন্ত মেধার সঙ্গে মাধ্যমিক উত্তির্ন হওয়ার পর ১৯৫৬ সালে পাকাপাকিভাবে ত্রিপুরায় চলে আসেন। তিনি আগরতলার গাঙ্গাইল রোডস্থিত রামকৃষ্ণ আশ্রমে থেকে এমবিবি কলেজে পড়াশোনা শুরু করেন । সেখান থেকেই বিএ অনার্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
এমবিবি কলেজের পড়াশোনা শেষ হওয়ার পরই তিনি যুক্ত হন শিক্ষকতার পেশায়। এই পেশাজীবনে তিনি রাজ্যের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করেন । পাশাপাশি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দিরে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাঁর নিষ্ঠা ও সততায় মুগ্ধ হয় গোটা রাজ্যে শিক্ষা অনুরাগীরা। ১৯৯৫ সালে শিক্ষক হিসেবে রাজ্যসম্মাননা অর্জন করেন পরেশ চন্দ্র চক্রবর্তী। পরে ১৯৯৭ সালে পান শিক্ষক হিসেবে রাষ্ট্রপতি সম্মান।
শিক্ষকতার পাশাপাশি সেবাব্রতী মনোভাবের জন্য তিনি সকলের কাছে সমাদৃত হন। ১৯৯০ সালে নিজের ঘাটের পয়সা খরচ করে আমতলী এলাকায় চল্লিশ কানি জমি ক্রয় করে রামকৃষ্ণ আশ্রমের জন্য দান করেন এবং রানীর খামারে পনেরো কানি জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠা করেন রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ আশ্রম। এখানে ঠাকুর ঘরের আগুন থেকে অগ্নি দগ্ধ হন পরেশ চন্দ্র চক্রবর্তী । এতেই সোমবার সকালে হাসপাতালে চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
রাজ্যের গুনী শিক্ষাব্রতী পরেশ চন্দ্র চক্রবর্তীর আকস্মিক প্রয়াণে গভীর শোক ব্যাক্ত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা। নিজের সামাজিক মাধ্যমে শোক ব্যাপ্ত করে তিনি লিখেন, "আগরতলা ধলেশ্বর রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দিরের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক, রানীরখামার রামকৃষ্ণ আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তথা জাতীয় পুরষ্কার প্রাপ্ত শিক্ষক শ্রদ্ধেয় পরেশ চন্দ্র চক্রবর্তী মহোদয়ের আকস্মিক দুর্ঘটনা জনিত কারণে প্রয়াত হওয়ার খবরে আমি অত্যন্ত ব্যাথিত।
উনার পরিবার-পরিজন ও গুনমুগ্ধদের প্রতি আমি সমবেদনা ব্যক্ত করছি এবং ঈশ্বরের কাছে উনার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি।"
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন