আগরতলা, ৩১ মে : সম্প্রতি নতুন দিল্লিতে অনুষ্ঠিত রাইজিং নর্থ-ইস্ট ইনভেস্টার্স সামিটে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের জন্য মোট ৪৩ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। ত্রিপুরার ক্ষেত্রে সামিটে ৬৪টি মৌ স্বাক্ষরিত হয়েছে। যার মাধ্যমে ১৫,৮২৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে। আজ এনইআর-স্টেক হোল্ডারস কনসাল্টেশন প্রোগ্রামে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা। হোটেল পোলো টাওয়ারে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে রাজ্য এবং বহিরাজ্যের বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংস্থার প্রতিনিধিগণ, ত্রিপুরা সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চল রাজ্যগুলির বিভিন্ন দপ্তরের সচিব, অধিকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা বলেন, রাইজিং নর্থ-ইস্ট ইনভেস্টার্স সামিটে জাপান, ইউরোপ, আশিয়ান সহ ৮০টি'র বেশি দেশের প্রতিনিধিগণ অংশ নিয়েছিলেন। এই সামিটের ফলে আগামীদিনে উত্তর-পূর্ব ভারত অর্থনৈতিক শক্তিকেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, ত্রিপুরা ও ডোনার মন্ত্রকের যৌথ উদ্যোগে ইতিমধ্যে ১৮৪টি মৌ স্বাক্ষরিত হয়েছে। যার মাধ্যমে ১৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এরমধ্যে ২৫ শতাংশের বেশি বাস্তবায়িত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে বলেন, উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলির বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রগুলিকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সর্বাধিক কাজে লাগানো যেতে পারে। এরমধ্যে ত্রিপুরার ক্ষেত্রে পর্যটন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আগর, বাঁশ ও রাবারের উপর সর্বাধিক বিনিয়োগ করা যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শিল্প স্থাপনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য ভূমি, বিনিয়োগ ও উন্নয়ন সম্পর্কিত আইন ও নীতিমালা পুনঃবিবেচনা করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভর্তুকী, করমুক্তির ব্যাপারে দৃষ্টি দিতে হবে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিনিয়োগের জন্য গঠিত উচ্চপর্যায়ের টাস্কফোর্সের মূল দায়িত্ব হল এই অঞ্চলকে বিনিয়োগকারীদের নিকট যোগ্য বিনিয়োগের গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রয়োজনীয় কৌশলগত রোড ম্যাপ প্রস্তুত করা। ইতিমধ্যেই এই টাস্কফোর্সের দুটি সভা সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ৬ মাসের মধ্যে প্রয়োজনীয় রোড ম্যাপ তৈরি করা হবে। তিনি বলেন, শিল্প স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় রেল, সড়ক, বিমানবন্দর, জলপথ, ব্যাঙ্কিং পরিষেবা, টেলিকম পরিষেবার মত মৌলিক পরিকাঠামোগুলির উন্নয়নে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কেন্দ্রীয় সরকার অধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্যে শিল্প স্থাপনের সদর্থক মনোভাবের সৃষ্টির জন্য ত্রিপুরা সরকার শিল্প বিনিয়োগ পলিসি, আইটি পলিসি, আগর পলিসি, পর্যটক পলিসি, স্টার্ট আপ পলিসি, ইলেক্ট্রিক ভ্যাহিক্যাল পলিসি গ্রহণ করেছে। তাছাড়া বিজনেস রিফর্মস অ্যাকশন প্ল্যান-২০২৪ এর অধীনে ৩৮৭টি সংস্কার সফলভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে রাজ্যে ত্রিপুরা জন বিশ্বাস (সংশোধনী) অধ্যাদেশ পাশ করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ত্রিপুরা শিল্প উন্নয়ন নিগম ১,৫০০ একরেরও বেশি নতুন শিল্প অঞ্চল, ক্ষেত্রভিত্তিক শিল্প পার্ক এবং প্রধান সড়কের পাশের জমি উন্নয়ন করেছে। রাজ্যে ৮৬, ১১৭টি'রও বেশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প রয়েছে। ব্লক ও পুর পরিষদ কার্যালয়গুলিতে এমএসএমই'র হেল্পডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে। এসকল শিল্পে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও উৎপাদিত পণ্য পরিবহণের জন্য ভর্তুকী দেওয়া হচ্ছে। রাজ্যে ৬০,৩১৮টি স্বসহায়ক দল রয়েছে। ১ লক্ষের বেশি লাখপতি দিদিও রয়েছেন।
অনুষ্ঠানে শিল্প ও বানিজ্য মন্ত্রী সান্তনা চাকমা বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিকে অষ্টলক্ষী নামে অভিহিত করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক দৃষ্টিভঙ্গির ফলে ত্রিপুরা সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চল দ্রুত উন্নয়ন ও প্রগতির পথে এগুচ্ছে। অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদ, বিকাশের সম্ভাব্য দিকগুলির জন্য উত্তর-পূর্বাঞ্চল বিনিয়োগের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অ্যাক্ট ইষ্ট পলিসি এবং এ অঞ্চল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নিকটবর্তী হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন সম্ভাবনাময় দিক উন্মোচিত করেছে। অনুষ্ঠানে ত্রিপুরা শিল্প উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান নবাদল বণিক উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে বলেন, ত্রিপুরার জিএসডিপি গত ৬ বছরে দ্বিগুণ হয়েছে। এক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। কেন্দ্রীয় ডোনার মন্ত্রক থেকেও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিনিয়োগের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের অধিকর্তা ড. শৈলেশ কুমার যাদব।
Blood Donation : টিসিএ-র রক্তদান শিবিরে মুখ্যমন্ত্রী, করলেন ব্যাটারিচালিত ড্রিংকস কারের সূচনা
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন