আগরতলা, ০১ জুন : আবহাওয়া দপ্তর (IMD), আগরতলা কেন্দ্রের জারি করা প্রেস রিলিজ অনুসারে, সক্রিয় বর্ষাকালীন পরিস্থিতি এবং অতিরিক্ত আর্দ্রতার প্রবাহের ফলে ৩১ মে ও ১ জুন ২০২৫ তারিখে ত্রিপুরা জুড়ে ব্যাপক ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। বর্তমান এবং পূর্বাভাস অনুযায়ী আবহাওয়ার প্রেক্ষিতে, আজ ও আগামীকালের জন্য রাজ্যের সকল জেলায় রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। রবিবার মহাকরণে এক সাংবাদিক সম্মেলনে একথা জানান রাজস্ব দপ্তরের সচিব ব্রিজের পান্ডে। তিনি জানান মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা নিয়মিতভাবে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছেন এবং রাজস্ব সচিব সমস্ত জেলা শাসকদের (DM) সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করছেন। জেলাগুলি সম্ভাব্য সকল প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
রাজস্ব দপ্তরের সচিব তথ্য দিয়ে জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় বোধজং নগরে (পশ্চিম ত্রিপুরা) বৃষ্টি হয়েছে: ১৯৮.৫ মিমি, কৈলাশহর (উনকোটি): ১৯২.২ মিমি, জিরানিয়া (পশ্চিম ত্রিপুরা): ১৭৫.৫ মিমি, আগরতলা (পশ্চিম ত্রিপুরা): ১৪০ মিমি। পশ্চিম ত্রিপুরা ও উনকোটি জেলায় মোট ১৪টি উদ্ধারকারী দল মোতায়েন করা হয়েছে বলেও তিনি জানান। এই বিষয়ে তিনি বলেন, রাজ্যে মোট ৬০টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে এর মধ্যে পশ্চিম ত্রিপুরায়-৪৮টি, খোয়াই-৩টি, উনকোটি-৩টি এবং উত্তর ত্রিপুরায়-৬টি। এই ত্রাণ শিবিরগুলিতে প্রায় ২,৮০০টি পরিবার ও প্রায় ১০,৬০০ জন আশ্রয় নিয়েছেন।
রাজস্ব দপ্তরের সজীব সাংবাদিকদের জানান, পশ্চিম ত্রিপুরায় উদ্ধার কাজে ১১টি দল সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যে NDRF-২, SDRF-৩, আসাম রাইফেলস-১, দমকল বিভাগ-১, সিভিল ডিফেন্স/আপদ মিত্র/ভারত স্কাউটস অ্যান্ড গাইডস-৪টি। অপরদিকে উনকোটি জেলায় সক্রিয় রয়েছে ৩টি উদ্ধারকারী টিম। এর মধ্যে NDRF-১, সিভিল ডিফেন্স/আপদ মিত্র-২টি।
রাজস্ব দপ্তরের সচিব জানান, উত্তর ত্রিপুরা, উনকোটি, ধলাই ও পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার বিভিন্ন রাস্তায় গাছ পড়া ও ধসের কারণে যাতায়াত ব্যাহত হয়েছে। তবে কমিউনিটি ভলান্টিয়ার, SDRF, বন দপ্তর, PWD ও কুইক রেসপন্স টিমের দ্রুত পদক্ষেপে অনেক রাস্তায় চলাচল পুনরায় চালু হয়েছে। তিনি বলেন, প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, মোট ২০১টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে — যার মধ্যে ৯২টি গুরুতরভাবে এবং ১০৯টি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ক্ষতিগুলি প্রধানত গোমতি, খোয়াই, সেপাহিজলা ও উত্তর ত্রিপুরা জেলায় ঘটেছে। বিস্তারিত সমীক্ষা চলছে।
রাজস্ব দপ্তরের সচিব আরও বলেন, আজ বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা, মাননীয় রাজ্যসভার সংসদ রাজীব ভট্টাচার্য, আগরতলা পৌর নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার সহ পদস্থ আধিকারিকরা, আগরতলার চন্দ্রপুর, প্রতাপগড় ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, বিবেকানন্দ স্কুল, প্রগতী স্কুল, তুলসীবতী স্কুল ও বি. আর. আম্বেদকর স্কুলে অবস্থিত বন্যাক্রান্ত এলাকা ও ত্রাণ শিবিরগুলি পরিদর্শন করেন। এই পরিদর্শনের সময় মুখ্যমন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সঙ্গে কথা বলেন, তাদের উদ্বেগ শোনেন এবং সরকারের তরফ থেকে সমস্ত রকম সাহায্য ও দ্রুত ত্রাণ প্রদানের আশ্বাস দেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে পশ্চিম ত্রিপুরার জেলা শাসক ডঃ বিশাল কুমার জানান, আগরতলায় হাওড়া নদীর জলস্তর আজ বিকাল ৫টায় ছিল ১০.৯১ মিটার, যা বিপদসীমার ওপরে। তবে এটি সকাল থেকে স্থিতিশীল ছিল এবং গত এক ঘণ্টা ধরে জলস্তর কমার প্রবণতা দেখা গেছে। প্রশাসন পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে। তিনি বলেন, আগরতলায় ১৭টি পাম্প হাউস রয়েছে, যেগুলি হাওড়া ও কাটাখাল নদীতে শহরের জল নিষ্কাশন করে। গতকাল মাত্র ২ ঘণ্টার মধ্যে প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় সাময়িক জল জমে যায়, তবে তা ২-৩ ঘণ্টার মধ্যে নিষ্কাশন হয়ে যায়। জেলাশাসক নাগরিকদের উদ্দেশ্যে আহ্বান রাখেন, আতঙ্কিত না হয়ে স্থানীয় প্রশাসনের পরামর্শ অনুসরণ করার। নদী ও নিচু এলাকাগুলির কাছাকাছি যাওয়া থেকে বিরত থাকা এবং যেখানে অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, সেখানে প্রশাসনের নির্দেশ মেনে চলার।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন