আগরতলা, ০১ জুন : ত্রিপুরার দু'টি লোকসভা আসন এবং ৭-রামনগর বিধানসভা ক্ষেত্রের উপনির্বাচনের ভোট গণনা আগামী ৪ জুন, ২০২৪ অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৮টা থেকে ভোট গণনা শুরু হবে। রাজ্যের জেলা ও মহকুমা হেড কোয়ার্টারের মোট ২০টি স্থানে এই ভোট গণনা পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। শনিবার সচিবালয়ের প্রেস কনফারেন্স হলে এক সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক পুনিত আগরওয়াল একথা জানান। তিনি জানান, ১-ত্রিপুরা পশ্চিম সংসদীয় নির্বাচনী ক্ষেত্রের ভোট গণনা হবে ৭টি স্থানে এবং ২-পূর্ব ত্রিপুরা (এসটি) সংসদীয় নির্বাচনী ক্ষেত্রের ভোট গণনা ১৫টি স্থানে অনুষ্ঠিত হবে। শান্তিরবাজার এবং বিলোনীয়া এই দু'টি স্থানে উভয় সংসদীয় ক্ষেত্রের ভোট গণনা হবে। ইভিএম এবং অন্যান্য ভোটের রেকর্ডগুলি ২০টি বিভিন্ন স্থানে স্ট্রং রুমে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে রাখা হয়েছে। ইভিএম-এর ভোট গণনার জন্য দু'টি সংসদীয় নির্বাচনী ক্ষেত্রে মোট ৬০টি কাউন্টিং হল থাকবে। রিটার্নিং অফিসারগণ তাদের নিজ হেড কোয়ার্টারে পোস্টাল ব্যালটের ভোট গণনার জন্য দু'টি পৃথক কাউন্টিং হলের ব্যবস্থা করেছেন। সংসদীয় নির্বাচনী ক্ষেত্রের কাউন্টিং হলে ভোট গণনার জন্য ৮ থেকে ১৪টি কাউন্টিং টেবিলের ব্যবস্থা থাকবে। ১-ত্রিপুরা পশ্চিম সংসদীয় নির্বাচনী ক্ষেত্রের পোস্টাল ব্যালটের ভোট গণনা ২৮টি টেবিলে এবং ২-পূর্ব ত্রিপুরা (এসটি) সংসদীয় নির্বাচনী ক্ষেত্রের পোস্টাল ব্যালটের ভোট গণনা ১৫টি টেবিলে হবে। উভয় সংসদীয় নির্বাচনী ক্ষেত্রে রিটার্নিং অফিসারদের কাউন্টিং হলে ইটিপিবিএস (সার্ভিস ইলেক্টরস ভোট) এর প্রাক গণনার ব্যবস্থাও রয়েছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক পুনিত আগরওয়াল জানান, সমস্ত কাউন্টিং সেন্টারগুলিতে মিডিয়া সেন্টারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সাংবাদিকগণ মোবাইল নিয়ে মিডিয়া সেন্টার পর্যন্ত যেতে পারবেন। কাউন্টিং হল, স্ট্রং রুম এবং করিডোর ইত্যাদিতে সিসিটিভির ব্যবস্থা থাকবে। প্রতিটি গণনা কেন্দ্রে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলবৎ থাকবে, যাতে কোন ব্যক্তি অবৈধভাবে প্রবেশ করতে না পারে। কাউন্টিং হলের ভেতরে অফিসিয়াল রেকর্ডিং-এর জন্য অফিসিয়াল ভিডিও ক্যামেরা ছাড়া কোন ক্যামেরা বা ভিডিও ক্যামেরা নিয়ে যাওয়ার অনুমতি নেই। এছাড়াও মোবাইল, আই-প্যাড, ল্যাপটপ এবং অনুরূপ ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রাংশ বা কোন রেকর্ডিং যন্ত্র কাউন্টিং হলের ভিতরে নেওয়া যাবেনা। ম্যাচ বক্স, অস্ত্র এবং অন্যান্য দাহ্য জিনিসপত্র ইত্যাদি যাতে গণনা কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে তা নিশ্চিত করার জন্য রাজ্য পুলিশ মোতায়েন থাকবে। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক আরও জানান, রাজ্যের দু'টি সংসদীয় ক্ষেত্রের নির্বাচনের ভোট গণনার প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশন ৩১ জন কাউন্টিং অবজারভারকে নিযুক্ত করেছে। প্রার্থীরা কাউন্টিং টেবিল অনুযায়ী কাউন্টিং এজেন্ট নিযুক্ত করতে পারবেন এবং তাদের নিযুক্তিপত্র রিটার্নিং অফিসার বা অ্যাসিস্টেন্ট রিটার্নিং অফিসারদের কার্যালয়ে পাঠাতে হবে। ভোট গণনার ফলাফল এবং গণনার গতিবিধি সময়ে সময়ে কমিশনের ওয়েবসাইট ও ভোটার হেল্পলাইন অ্যাপে তুলে ধরা হবে। রাজ্যের দুটি লোকসভা আসনের ভোট গণনা পর্বকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
এদিকে ভোট গণনা প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করার লক্ষ্যে আজ রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক পুনিত আগরওয়ালের সভাপতিত্বে এক সর্বদলীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক কার্যালয়ের কনফারেন্স হলে আয়োজিত এই সর্বদলীয় সভায় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক উষাজেন মগ, অতিরিক্ত মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক শুভাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিগণ।
সভায় মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক পুনিত আগরওয়াল বলেন, আগামী ৪ জুন, ২০২৪ তারিখে রাজ্যের দু'টি সংসদীয় ক্ষেত্রের ভোট গণনা এবং ৭-রামনগর বিধানসভা ক্ষেত্রের উপনির্বাচনের ভোট গণনা সম্পন্ন করা হবে। রাজ্যের মোট ২০টি ভোট গণনা স্থানে সকাল ৮টা থেকে ভোটগণনা প্রক্রিয়া শুরু হবে। মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক জানান, রাজ্যের প্রতিটি গণনা কেন্দ্রের ১০০ মিটারের মধ্যে ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকবে। ৬০টি বিধানসভা ক্ষেত্রের অতিরিক্ত রিটার্নিং অফিসারের তত্বাবধানে গণনা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। রাজ্যের ২০টি গণনা স্থানের ৬০টি গণনাকেন্দ্রের প্রতিটিতে ৮-১৪টি গণনা টেবিলে ভোট গণনা করা হবে। মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক পুনিত আগরওয়াল জানান, ১-ত্রিপুরা পশ্চিম সংসদীয় ক্ষেত্রে ইভিএমে ভোট পড়েছে ৮১.৪৮ শতাংশ এবং ২-ত্রিপুরা পূর্ব (এসটি) সংসদীয় ক্ষেত্রে ইভিএম-এ ভোট পড়েছে ৮০.৩৬ শতাংশ। ১-ত্রিপুরা পশ্চিম সংসদীয় ক্ষেত্রে গতকাল পর্যন্ত ২০,২৮৩টি, ২-ত্রিপুরা পূর্ব (এসটি) সংসদীয় ক্ষেত্রে ১৪,৩৬৪টি এবং ৭-রামনগর বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ১১০১টি ব্যালটপেপার জমা পড়েছে। ত্রিপুরার দু'টি সংসদীয় ক্ষেত্রের রিটার্নিং অফিসারদের টেবিলে ব্যালট পেপারের ভোট গণনা করা হবে। ভোট গণনার দিন সকাল ৮টা পর্যন্ত যে সকল ব্যালট পেপার রিটার্নিং অফিসারদের অফিসে পৌঁছাবে সেই ব্যালটগুলিও গণনা করা হবে। প্রতিটি বিধানসভা ক্ষেত্রের এআরও'র টেবিলে পাঁচটি করে ভিভিপ্যাট গণনা করা হবে। সুষ্ঠুভাবে গণনা পর্যবেক্ষণের জন্য ভারতের নির্বাচন কমিশন থেকে ৩১ জন কাউন্টিং অবজারভারকে নিযুক্ত করা হয়েছে।
সর্বদলীয় সভায় মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক পুনিত আগরওয়াল বলেন, আজ সন্ধ্যা পাঁচটার মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাউন্টিং এজেন্টদের নামের তালিকা জমা দিতে হবে। গণনা কেন্দ্রে প্রবেশের জন্য রাজনৈতিক দলের কাউন্টিং এজেন্টদের নির্বাচন দপ্তরের গাইডলাইন মেনে প্রবেশ করতে হবে। প্রতিটি গণনা কেন্দ্রে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা বলয় তৈরী করা হয়েছে। গণনা পরবর্তী সময়ে শান্তি বজায় রাখতে এবং নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত ফলাফল সকলকে মেনে নেওয়ার জন্য তিনি আহ্বান জানান।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন