নতুন দিল্লি, ০৮ মে : বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় সন্ত্রাসবাদী হামলায় জড়িত থাকার ফলে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের কেন্দ্র হিসেবে পাকিস্তানের পরিচয় তৈরী হয়েছে। নতুন দিল্লিতে আজ সন্ধ্যায় এক সাংবাদিক বৈঠকে একথা বলেন বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রী। তিনি বলেন, পাকিস্তানের পক্ষ থেকে যেকোনো রকম পদক্ষেপই উত্তেজনা বাড়াতে নেওয়া হচ্ছে। আজ’ও এধরণের কিছু ঘটনা ঘটেছে, যার জবাব দিয়েছে ভারতীয় সেনা। আগামী দিনেও ভারত এভাবেই সক্রিয় থাকবে।
বিদেশ সচিব বলেন, পহেলগাঁও-এ জঙ্গী হামলাই প্রকৃত অর্থে উত্তেজনার সূত্রপাত ঘটিয়েছে, যার শুধুমাত্র উচিত প্রত্যুত্তর দিয়েছে ভারত। পহেলগাঁও-এ নিয়ে রাষ্ট্রসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনা চলাকালীন পাকিস্তান এই ঘটনায় ‘দ্য রেজিস্টান্ট ফ্রন্ট’ বা TRF-এর ভূমিকা অস্বীকার করেছে। এবং একবার নয়, দুবার TRF ওই হামলার দায় স্বীকার করলেও, পাকিস্তান তা’ মানতে চায়নি। অশামা বিন লাদেনকে সেদেশে খুঁজে পাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে বিদেশ সচিব বলেন, পাকিস্তান, লস্কর-ই-তৈবা, জৈশ-ই-মহম্মদ-এর মতো রাষ্ট্রসংঘ তালিকাভুক্ত বড় জঙ্গী সংগঠনগুলির আঁতুড়ঘর হয়ে উঠেছে। গত কয়েকদিনে প্রতিবেশী রাষ্ট্রটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এবং প্রাক্তন বিদেশ মন্ত্রী স্বীকার করে নিয়েছেন, এধরণের জঙ্গী সংগঠনগুলির সঙ্গে জড়িত থাকার কথা।
‘অপারেশন সিন্দুর’-এ নিহত জঙ্গীদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্যের ছবিও বিদেশ সচিব তুলে ধরেন। বিক্রম মিশ্রী বলেন, গতকাল পাকিস্তান জম্মু কাশ্মীরের পুঞ্চ-এ একটি গুরুদ্বোয়ারা লক্ষ করে শিখ সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর হামলা চালায়। ‘সিন্ধু জল চুক্তি’-র বিষয়ে তিনি জানান, পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে ইচ্ছাকৃতভাবে ওই এলাকায় রোড বন্ধ করে রেখেছে। বৈঠকে উপস্থিত কর্ণেল সোফিয়া কুরেশী এবং উইং কমান্ডার ভ্যোমিকা সিং জানান, উত্তর পশ্চিম ভারতে পাকিস্তান সেনাঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। ভারত’ও এর যোগ্য জবাব দিচ্ছে।
এদিকে পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনা বৃদ্ধি ভারতের উদ্দেশ্য নয়, তবে দেশটি যদি হামলা চালায় তবে তার সমুচিত জবাব দেওয়া হবে বলে বিদেশমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর জানিয়েছেন। নতুনদিল্লীতে বৃহস্পতিবার ভারত-ইরান ২০তম যৌথ কমিশনের বৈঠকে তিনি একথা বলেন। শ্রী জয়শঙ্কর এবং ভারত সফররত ইরানের বিদেশমন্ত্রী ড. সৈয়দ আব্বাস আরাঘচি যৌথভাবে এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। শ্রী জয়শঙ্কর বলেন, পহেলগাঁও-এ সন্ত্রাসবাদী হামলা ভারতকে সীমান্ত পারের জঙ্গি ঘাঁটিগুলি ভেঙে দিতে বাধ্য করেছে।
অপরদিকে পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের ওপর জঙ্গী হামলার জবাবে অপারেশন সিন্দুরের প্রেক্ষিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং-এর সভাপতিত্বে আজ সর্বদলীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সংসদ ভবন চত্বরের কমিটি রুমে এই বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী, তৃণমূল কংগ্রেস নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেণ রিরিজু বলেন, অপারেশন সিন্দুর সম্পর্কে সকলকে অবহিত করা হয়েছে। বিভিন্ন দলের নেতারা তাদের পরামর্শও দিয়েছেন। তারা সরকার এবং ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীকে সমর্থনের কথাও জানিয়েছেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন