আগরতলা, ১৪ জুন : মানুষ মানুষেরই জন্য, তা রক্তদানের মাধ্যমেই প্রমাণিত হয়ে আসছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে রক্তের বিকল্প আবিষ্কার না হওয়ায় একজন মানুষই তার দান করা রক্তের মাধ্যমে আরেকজন মানুষের জীবন বাঁচাতে পারেন। তাই রক্তদান হল সমস্ত দানের উর্ধ্বে। শুক্রবার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে বিশ্ব রক্তদাতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা একথা বলেন। স্বাস্থ্য দপ্তর ও ত্রিপুরা রাজ্য রক্ত সঞ্চালন পর্ষদের উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে নিয়মিত তিনজন নেগেটিভ গ্ৰুপের রক্তদাতাকে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের হাতে পুষ্পস্তবক ও গাছের চারা তুলে দেন।
উল্লেখ্য, প্রতিবছর ১৪ জুন রক্তের গ্রুপ আবিষ্কারের জনক কার্ল ল্যান্ডস্টেইনারের জন্মদিনটিকে স্মরণীয় রাখতে বিশ্বজুড়ে বিশ্ব রক্তদাতা দিবস হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। এবছর ২০তম বিশ্ব রক্তদাতা দিবস সারা দেশের সঙ্গে রাজ্যেও পালন করা হচ্ছে। এই দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণের মধ্যে রক্তদান সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী পতাকা নেড়ে ধলাই জেলা হাসপাতালের জন্য বিসিটিভি গাড়ির সূচনা করেন।
অনুষ্ঠনে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, জাতপাতের ভেদাভেদের উর্ধ্বে উঠে গিয়ে স্বেচ্ছা রক্তদান হল মানবধর্মের শ্রেষ্ঠ দান। সমাজের প্রত্যেককেই এই মানবধর্ম পালন করা উচিত। কারণ রক্তদানের মাধ্যমেই একে অপরের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। যেখানে ধর্ম-বর্ণ- জাতপাতের কোনও স্থান থাকে না। রক্তদাতা ও রক্তগ্রহীতার মধ্যে একটা মৈত্রীর বন্ধনও তৈরি হয়। একজন ব্যক্তির দান করা রক্তের মাধ্যমে ৩-৪ জন মুমূর্ষু রোগীর প্রাণ বাঁচানো যেতে পারে। রাজ্যে গত বিধানসভা নির্বাচনের সময় সরকারি ১২টি ও বেসরকারি ২টি ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের অভাব পরিলক্ষিত হয়। রক্তের এই অভাব দূর করতে নির্বাচনের পর রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে রাজ্যব্যাপী রক্তদান শিবির আয়োজন করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছিল। রাজ্য সরকারের এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, ক্লাব সহ সামাজিক সংগঠনগুলি রক্তদান শিবিরের আয়োজন করছে। এজন্য মুখ্যমন্ত্রী সকলকেই আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে বলেন, স্বাস্থ্য দপ্তর প্রতিবছরই ৫০ হাজার ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে থাকে। এরমধ্যে ৫৪ শতাংশ রক্ত সংগ্রহ হয় স্বেচ্ছা রক্তদানের মাধ্যমে। এই হারকে ৮০-৯০ শতাংশে পৌছানোর উদ্যোগী হতে হবে। এজন্য বিভিন্ন ক্লাব, সামাজিক সংস্থা সহ মহাবিদ্যালয়গুলিকে আরও বেশি করে এগিয়ে আসতে হবে। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ত্রিপুরা রাজ্য রক্ত সঞ্চালন পর্ষদের সদস্য সচিব ডাঃ বিশ্বজিৎ দেববর্মা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য দপ্তরের অধিকর্তা ডাঃ সঞ্জীব দেববর্মা, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের অধিকর্তা ডাঃ অঞ্জন দাস, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের মিশন ডিরেক্টর রাজীব দত্ত এবং ত্রিপুরা এইডস কন্ট্রোল সোসাইটির প্রকল্প অধিকর্তা ডাঃ সমর্পিতা দত্ত। অনুষ্ঠানের শুরুতে রক্তের গ্রুপ বিন্যাস আবিষ্কারের জনক কার্ল ল্যান্ডস্টেইনারের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিগণ।
Sikkim Landslide : দুই মহিলা সহ ৩ জনের মৃত্যু, ক্ষতিগ্রস্ত বহু বাড়ি-ঘর
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন